আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ১৬৬ এবং বিএনপি সর্বোচ্চ ১৩৭টি আসন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে একটি গবেষণার প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানান প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ।
ড. আবুল বারকাত বলেন, এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে এবং সব দল, প্রার্থী ও ভোটারের জন্য নির্বাচনি মাঠ সমান হলে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৮ থেকে ১৬৬টি, বিএনপি ১১৯ থেকে ১৩৭টি এবং অন্যান্য দল ১৫টি আসন পেতে পারে।
তিনি বলেন, ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টির ভাগ্য মোটামুটি নির্ধারিত। এসব আসনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ভিত্তি আসন’ বা ‘সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত’। এই ১৫৫টি ভিত্তি আসনের মধ্যে ৭০টি করে আসন পেতে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বাকি ১৫টি আসন পেতে পারে জাতীয় পার্টি, জামায়াত, এলডিপি ও বিজেপি।
তিনি আরও বলেন, বড় দুই দলের মধ্যে যে কোনো দলকে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আরও ৮১টি আসন পেতে হলে ‘দোদুল্যমান ভোটারদের’ ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে। আর যে কোনো আসনে জিততে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদানের সিদ্ধান্তে দ্রব্যমূল্য, মানব নিরাপত্তা, পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন, নিষেধাজ্ঞা, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ ঘোষণা অবজেক্টিভ ফ্যাক্টর এবং সংশ্লিষ্ট কাউন্টার ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে।
এছাড়া প্রভাবক হিসাবে আত্বীয়তা, বন্ধুবান্ধব, ঘনিষ্ঠজন, মুরুব্বিদের উপদেশ-আদেশ-নির্দেশ, পিতৃতান্ত্রিকতা (নারীর ক্ষেত্রে) সাবজেক্টিভ ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে।
অধ্যাপক আবুল বারকাত আরও বলেন, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিভিন্ন উপায়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভোটারের সম্ভাব্য দলীয় আনুগত্য অবস্থা, ভিত্তি ভোটের (দলীয় অনুগত ভোটারের ভোট) ধারণা, ভিত্তি আসনের (সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত আসন) ধারণা, বিজয় অনিশ্চিত আসনের ধারণা, দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনের ফ্যাক্টর-কাউন্টার ফ্যাক্টর এবং এসবের সম্ভাব্য প্রভাব ও গতিমুখ, ভোটারদের ভৌগোলিক অবস্থান বিভাজন (পদ্মা সেতুর প্রভাব অঞ্চল এবং তার বাইরের অঞ্চল) ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি বিজয় নিশ্চিত এবং ১৪৫টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখবেন দোদুল্যমান ভোটাররা। তবে ভিত্তি আসন অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে বিজয় নিশ্চিত আসনে দোদুল্যমান ভোটারদের ভূমিকা থাকবে কম।
অন্যদিকে বিজয় অনিশ্চিত আসনের ভাগ্য নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা থাকবে দোদুল্যমান ভোটারদের।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বিভিন্ন অনুসিদ্ধান্তভিত্তিক হিসাবপত্রে দেখা যায়, দেশের ১৪৫টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৭৮-৯৬টি আসন এবং বিএনপি ৪৯-৬৭টি আসন পেতে পারে।
পদ্মা সেতুর কারণে পদ্মা সেতু ভোট লভ্যাংশ হিসাবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের সবকটিতে আওয়ামী লীগ এবং ঢাকাসহ দেশের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলের ১২২টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৫-৭৩টি এবং বিএনপি ৪৯-৬৭টি আসন পেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল বহাল থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষে জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে জোট হতে পারে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবেও সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে।
যদি তাদের আসন সংখ্যার গতিমুখ সর্বোচ্চ সম্ভাব্য-আসনমুখী হয় (অর্থাৎ সর্বনিম্ন ১৪৮ আসন থেকে সর্বোচ্চ ১৬৬ আসনমুখী হয়)। সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল যদি বহাল থাকে, তাহলে বিএনপির পক্ষে এককভাবে সরকার গঠন সম্ভাবনা নেই। তবে বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের গাণিতিক যে সম্ভাবনা আছে, তা যথেষ্ট শর্তসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে বিএনপিকে অবশ্যই সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক আসনপ্রাপ্তি (১৩৭টি আসন) নিশ্চিত করে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ অন্য সবার সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হবে।