নগরঘেষা সুরমার ১৫ কিলোমিটারে ড্রেজিং শুরু হচ্ছে শীঘ্রই

চলতি বছর সিলেটে দুই দফা বন্যায় সবচেয়ে আলোচনায় ছিল সুরমা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। যেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণে দাবী ওঠেছিল সুরমা নদী খননের। এমন বাস্তবতায় সুরমা নদীর ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় শীঘ্রই প্রতীক্ষিত ড্রেজিং শুরু হচ্ছে। একই সাথে বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলায় ১৬৫০ মিটার নদীর তীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট।

রোববার (২৩ অক্টোবর) সিলেটের একটি কনফারেন্স হলে সুরমা নদীর ভাঙন থেকে দশগ্রাম, মাহতাবপুর এবং রাজাপুর পরগনা বাজার এলাকা রক্ষার সম্ভাব্যতা সমীক্ষার উপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতবিনিময় কর্মশালায় সংশ্লিষ্টরা এমন তথ্য জানান।

‘বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণাবাজার এলাকায় সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন থেকে রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক ও পাউবো, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, এরই মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট শহরের অদূরে কুশিঘাট এলাকা থেকে সদর উপজেলার দশগ্রাম পর্যন্ত ১৫.০৫ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং (খনন) করা হবে।

এদিকে বিকালে ওই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার উপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতবিনিময় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

এসময় তিনি মহানগরীর কুশিঘাট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত সুরমা নদীর ভাঙন রোধ ও ড্রেজিং এর মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিশেষ তাগিদ দেন।

মন্ত্রী বলেন, পানির প্রবাহ রক্ষায় প্রকল্প গ্রহনে চিন্তাভাবনার পাশাপাশি সিলেট সদর-বিশ্বনাথ উপজেলায় সুরমা নদীর ভাঙন রোধে হাতে নেয়া প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে। যাতে করে আগামীতে বন্যায় মানুষকে আর কষ্ট করতে না হয়।

এসময় বিগত বন্যার ভয়াবহতা উল্লেখ করে তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণে, হাওর, ছড়া ও জল্লা খননের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে পাউবো সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় সুরমা নদীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় সাড়ে ১৮ কিলোমিটার চর জেগেছে এবং ১৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই চর অপসারণ এবং তীর ভাঙন প্রতিরক্ষার্থে বাপাউবো ‘বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণাবাজার এলাকায় সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন থেকে রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলায় ১৬৫০ মিটার নদীর তীর ভাঙন প্রতিরোধ ও সুরমা নদীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার ড্রেজিং। আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।

এছাড়া কানাইঘাট থেকে ছাতক পর্যন্ত আরও প্রায় ১২৫ কিলোমিটার সুরমা নদী ড্রেজিং পরিকল্পনা রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদী ভাঙনের কবল থেকে জমি ও স্থাপনা রক্ষা, কৃষি ও মৎস উৎপাদন বৃদ্ধি, পানির ধারণ ক্ষমতা ও গুনগত মান বৃদ্ধি, পরিবেশগত উন্নয়ন ও মানুষের জীবযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে বলে জানান পাউবো কর্মকর্তারা।

কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত উপকারভোগী সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহন করেন।

বাপাউবো সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর পূর্বাঞ্চল) এস. এম. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা, নকশা ও গবেষণা) ড. জিয়া উদ্দীন বেগ, অতিরিক্ত পরিচালক (পূর্ব রিজিয়ন) মো. মাহবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

এর আগে চলতি বছরের মে ও জুন মাসে স্মরণকালের দুদফা বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ে সিলেট। গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যা থেকে রেহাই পায়নি সিলেট নগর। এমন বাস্তবতায় সুরমা নদী খননের বিষয়টি সামনে চলে আসে। তখন সিলেট সফরে এসে বিভিন্ন সভা সমাবেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেনও সুরমা খননের উপর জোর দেন। বলেন, ‘সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক।

সেসময় তিনি নদী খননের পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও জানান। এমনকি আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খননের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

এরই প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট শহরের অদূরে কুশিঘাট এলাকা থেকে সদর উপজেলার দশগ্রাম পর্যন্ত ১৫.০৫ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং (খনন) করতে প্রকল্প হাতে নেয়।