দেখার হাওরের দুইপাড়ের হাডুডু খেলা, আস্তমা গ্রামে উৎসব

দেখার হাওরের দুইপাড়ের খেলা। উত্তরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লারপাড়া ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রাম এবং দক্ষিণ পাড়ে শান্তিগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা। মাঝখানে হাওরের ৪৫ হাজার ৮শ ৬৯ হেক্টর জমি। দুই এলাকার ৮০টি কাবাডি খেলার দল জড়ো হয়েছেন আস্তমা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। খেলা দেখতে এসেছেন হাজারো দর্শক সমর্থক।

গ্রামের প্রধান পয়েন্টে উৎসব মুখর পরিবেশ লক্ষনীয়। লোকে লোকারণ্য গ্রামের পয়েন্টের চারদিক। খেলাকে কেন্দ্র করে বসেছে উপরি দোকানপাট। দেখলে মনে হবে যেনো গ্রাম্য মেলা। দুই দলের খেলা শেষ হলে মাঠে নামছে দুই নতুন দল। একের পর খেলা চলতে থাকে আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। এভাবেই শনিবার দিনব্যাপী উৎসবে মেতে উঠেছে আস্তমা গ্রাম।

আয়োজক কমিটির লোকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মোল্লারপাড়া ইউনিয়নের রামেশ্বরপুরের পক্ষে নীলপুর, ভবানীপুর, ফতেহপুর, বোলবপুর, জলালপুরসহ ৪০টি দল ও জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামের পক্ষে আস্তমার বুলেট, মায়ের দোয়া, উড়ালপঙ্খী, আস্তমার কলেজ টিম, ছয়রাঙা ও ভাই ভাই টিমসহ আরও ৪০টি দল খেলায় অংশগ্রহণ করে। প্রতি দলে ৬জন করে খেলোয়ার খেলেছেন। সর্বমোট ৪শ ৮০ জন খেলোয়ার এ প্রীতি খেলায় অংশগ্রহণ করেন। খেলা শেষে আমন্ত্রিত খেলোয়ারদেরকে একটি জ্যান্ত খাসি উপহার দেওয়া হয়।

পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের রনসী গ্রাম থেকে আস্তমা গ্রামে হাডুডু খেলা দেখতে এসেছেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, খুব সুন্দরভাবে আমাদের এ অঞ্চলে আস্তমা গ্রামে হাডুডু খেলার আয়োজন করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে খেলোয়াড়েরা আসেন। অনেক সুন্দর খেলা হয়। আমরা দেখতে আসি। দারুণ উপভোগ করি। গ্রামীণ ঐতিহ্যের চিরায়ত এ খেলাকে ধরে রাখছেন আস্তমা গ্রামের মানুষজন। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ।

মোল্লারপাড়া থেকে রামেশ্বরপুরের হয়ে দল নিয়ে এসেছেন ভবানীপুর-জগন্নাথপুরের মো. আশরাফ আলী ও রামেশ্বরপুরের নিজাম উদ্দিন। তারা বলেন, প্রায় ৫শ মানুষ এসেছি আমরা। আস্তমা গ্রামবাসীর আয়োজন খুব সুন্দর। তাদের আতিথিয়েতায় আমরা মুগ্ধ। আমরাও তাদেরকে আমাদের এলাকায় আমন্ত্রণ জানাবো। এভাবে একসাথে ঐতিহ্য রক্ষা হবে পাশাপাশি সম্প্রীতির বন্ধনও অটুট হবে।

আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য জিল্লুর রহমান, সজ্জাদ মিয়া ও হাবিজ আলী বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ খেলার প্রচলন করে গিয়েছেন। গ্রামের মানুষের আনন্দ বিনোদনের একটি অন্যতম উপলক্ষ হচ্ছে খেলা। বংশ পরম্পরায় আমরা খেলাটি খেলে আসছি। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ খেলার ঐতিহ্য রক্ষা হচ্ছে অপর দিকে নির্মল আনন্দ বিনোদনের একটি ক্ষেত্র টিকে থাকছে। আমরা এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবো।’