দীর্ঘ ১৮ বছর পরও অনিশ্চিত কিবরিয়া হত্যার বিচার


  • সাক্ষীর অনুপস্থিতি, পরিবারের অসহযোগিতা
  • ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৪৭ জন সাক্ষী দিয়েছেন
  • গত এক বছরে আদালতে স্বাক্ষী দিয়েছেন মাত্র ৪ জন

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পূর্ণ হল আজ। ভয়াবহ সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু হলেও অনেকটা অনিশ্চয়তার মাঝে ঝুলে আছে আলোচিত এই হত্যামামলাটি।

এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালতে স্বাক্ষী না আসায় মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছানো হচ্ছে বার বার। তাছাড়া রয়েছে পরিবারের অসহযোগিতা।

এদিকে দির্ঘদিন ধরে আলোচিত এ হত্যার বিচার না হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন। ঘটনাস্থলে আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী। নৃশংস এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাংসদ আব্দুল মজিদ খান।

এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা দুটি মামলায় দীর্ঘ ১৮ বছরে ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৪৭ জন সাক্ষী দিয়েছেন। এমনকি গত এক বছরে আদালতে স্বাক্ষী দিয়েছেন মাত্র ৪ জন।

গত ১৫ জানুয়ারি সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এ হত্যা মামলার তারিখ থাকলেও মামলার কোন সাক্ষী হাজির হয়নি। ফলে বিচারক মো. শাহাদাত হোসেন প্রামাণিক, সাক্ষী হাজির না হওয়ায় কয়েকজন সাক্ষীর নামে পরোয়ানা ও সমন জারি করেন। পরে আদালতের বিচারক মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি।

এভাবে নানা কারণে দীর্ঘ ১৮ বছরেও মামলার কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা।

এমনকি মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ১৮ বছরেও এ মামলার বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্দ কিবরিয়া তনয় ড. রেজা কিবরিয়া। এক সাক্ষাৎকারে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘ঘটনার পরে আমরা দাবি করেছি একটা সুষ্ঠু তদন্তের এবং একটা বিচারের জন্য। সেই বিচার কিন্তু এতো বছরে হয়নি। কেন হয়নি দেশের মানুষ কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে।’

তিনি বলেন, দুই বছর, বিএনপি সরকার, দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার কেন এই বিচার করতে পারেনি, কেন তদন্ত করতে চায় না এটা জনগণ বুঝে। তিনি মারা যাওয়ার পর কিছু মানুষ অনেক সুবিধা পেয়েছে, কারা কারা পেয়েছে এটা সবাই জানেন। একদিন তাদের বিচার হবে। সেই দিন এখনও হয়নি। ১৮ বছর অপেক্ষা করেছি, আরও কিছুদিন আমরা অপেক্ষা করব।’

তবে মামলার ধীরগতির কারণ হিসেবে স্বাক্ষী ও আসামিদের অনুপস্থিতি, একাধিকবার পুনঃতদন্ত এবং পরিবারের অসহযোগিতার কথা জানালেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

সিলেট দ্রত বিচার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), এডভোকেট সরোওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেন, বিচারকার্য প্রথমে কিছুটা দেরী হয়েছে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকায় তদন্ত অত্যন্ত ধীরগতিতে হয়েছিল। সেই তদন্তের উপর পরিবারেরও নারাজি ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরেও কয়েকবার পুনঃতদন্ত হয়েছে, যে কারণে মামলার বিচারকার্য কিছুটা ধীরগতি হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে বিচার দ্রুতগতিতে চলছে।

তিনি বলেন, মামলার অনেক দিন হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সাক্ষী ঠিকানা পরিবর্তন করেছে, তাদের খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সাক্ষীর নামে পরোয়ানা ও সমন জারি করা হয়েছে। তাছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকেও মামলার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে না। তারপরও বছর খানেকের মধ্যে সকল সাক্ষী হাজির করতে চেষ্টা চালাবেন বলেন জানান এই আইনজীবী।

এর আগে, কয়েক দফা তদন্ত শেষে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের মেয়র জি কে গউছ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলারই চার্জশীট দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসপি মেহেরুন নেছা পারুল।

২০১৫ সালের জুনে এই মামলা হবিগঞ্জ থেকে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে সেখানেই চলছে আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার কাজ।