নতুন পদ্ধতিতে ধান চাষ করে কাঙ্খিত সাফল্য পেয়েছেন কৃষক সোলেমান খান। এ নিয়ে দারুণ আশাবাদী সুনামগঞ্জের এই প্রান্তিক কৃষক।
উপজেলার ভাটি পাড়া ইউনিয়নের চাতল পার গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সোলেমান খান। কালিকোটা হাওরে প্রথমবারের মত এ পদ্ধতি প্রয়োগ করার ফলে ৩ একর জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে তার। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মত এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হন তিনি।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষক সোলেমান খান ধান কর্তন শুরু করেন। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা মনোরঞ্জন অধিকারি, কৃষি উপসহকারী রাজীব দাস, খোরশেদ আলমসহ স্থানীয় কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক সোলেমান খান বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে ধান (জনক রাজ) চাষ করে আমি সফল। এ পদ্ধতিতে পরিশ্রম বেশি হলেও কম খরচে উৎপাদন বেশী।’
কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব সাধিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে কৃষিবিদ কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার মো. এনামুল হক বলেন, ‘নতুন এ পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে বাংলাদেশের কৃষকগণ যেই পরিমাণ জমিতে বর্তমানে ১০০-মণ ধান উৎপাদন করে, একই পরিমাণ জমিতে কিভাবে তারা ৪০০-মন ধান উৎপাদন করবে, এই নিয়ে আমার গবেষণা চলছে। ধানের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব কি-না তার একটি মডেল সুলাইমান খানের জমিতে এবার প্রথমবারের মত প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। আমি তাদের পদ্ধতিকে অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোরঞ্জন অধিকারি বলেছেন, এবার সব জমিতেই ভাল ফলন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে কৃষক সোলেমান খানের জমিতে তুলনামূলক বেশি ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে কিয়ার প্রতি ৪০/৪৫ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব।’
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার ছোট বড় ১০টি হাওরে ৩০ হাজার হেক্টর বোরো জমি আবাদ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৩ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৭ মেট্রিক টন।
নতুন এই পদ্ধতি কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে জানতে চাইলে কৃষি উপসহকারী খোরশেদ আলম জানান, জমিতে ২০/২৫ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। লাগানোর পূর্বে জমিতে শতাংশ প্রতি ৫০০ গ্রাম এমওপি সার, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, জিপসাম ১৫০ গ্রাম এবং কম্পোজ সার পরিমাণমত চাষের শেষ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে। লাইনে চারা রোপণ করতে হবে, ১২ ইঞ্চি দূরত্ব করে চারা রোপণ করতে হবে। হাইব্রিড ২টি চারা ও উপসি ৪টি চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের ১০ দিনের মাথায় পাইপে পানি ঢুকিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ পশ্চিম থেকে পূর্বে টান (মই) দিতে হবে। ২০ দিনের মাথায় ২০ কেজি ওজনের মই এবং ৩০ দিনের মাথায় একই কাজ করতে হবে। প্রতিবার এই কাজটি করার ২দিন পূর্বে শতাংশ প্রতি ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে ২-৩ ইঞ্জি পানি থাকতে হবে।
এর ফলে ২-৩ গুন বেশি কুশি (ডেমি) দিবে। চারা যত বেশি কুশি (ডেমি) দিবে ততই বেশি ফসল উৎপাদন হবে।