দিরাইয়ে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা, অভিযুক্ত ‘কালা হুজুর’!

মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা আবদুল লতিফ ওরফে কালা হুজুর

সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভাস্থ মজলিশপুর হালিমাতুস সাদিয়া (রা.) দারুল হাদিস মহিলা টাইটেল মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা আবদুল লতিফ ওরফে কালা হুজুরের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার জনৈক ছাত্রীকে হেনস্থা ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার তিনদিন পর রোববার (২৩ জুলাই) রাতে ভিকটিমের মামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার মুহতামীম কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রীকে হেনস্তা ও যৌন নির্যাতনের চেষ্টার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর মাদ্রাসা কমিটির লোকজন আপোষে নিস্পত্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর স্থানীয় আলেম সমাজের কয়েকজনকে নিয়ে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিষয়টি সুরাহা করতে দ্বিতীয় দফা চেষ্টা করা হয়। এরপর সত্যতা যাচাই করতে আলেম সমাজের লোকজন ভিকটিমের বাড়িতে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে তার সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পান।

এ ব্যাপারে মাওলানা নূরউদ্দিন আহমদ ও মাওলানা শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা পেয়ে আমরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলি। কিন্তু কমিটির লোকজন একমত হতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না।’

ভিকটিমের মা বলেন, ‘আমার বাচ্চাদের বাবা বিদেশ থাকে। সুবিধার কারণে তারা মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে। আমার মেয়েটির ইচ্ছে ছিল টাইটেল পাশ করবে। কিন্তু ওই কালা হুজুর মুহতামীম আবদুল লতিফ আমার মেয়েটির স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে।’

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিলর ইয়াহিয়া চৌধুরী বলছেন, ‘আমরা বিষয়টি সঠিকভাবেই শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একমত হতে পারি নাই।’

ভিকটিমের মামা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘ভিকটিম আমার আপন ভাগনী। তার পিতা বিদেশে থাকার কারণে দ্বীনি শিক্ষার সুবিধার্থে আমাদের বাসায় থেকে পৌরসভাস্থ মজলিশপুর হালিমাতুস সাদিয়া (রাঃ) মহিলা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। বর্তমানে সে উক্ত মাদ্রাসার ‘মিশকাত’ শ্রেণীর ছাত্রী। মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা আব্দুল লতিফ বেশ কিছুদিন যাবত আমার ভাগনীকে নানাভাবে উত্যক্ত ও বিরক্ত করাসহ পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। আমার ভাগনী মাওলানা আব্দুল লতিফ এর প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ২০/০৭/২০২৩ইং বৃহস্পতিবার দুপুর অনুমান ১২টার দিকে তাকে মাদ্রাসার একটি কক্ষে নিয়ে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। তখন সে দৌড়ে অন্যান্য ছাত্রীদের কাছে চলে আসলে উক্ত মাওলানা আব্দুল লতিফ বিষয়টি তুচ্ছ ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমার ভাগনী বিষয়টি আমাকে অবগত করলে আমি মাদ্রাসায় গিয়ে মুহতামীম মাওলানা আব্দুল লতিফের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমাকে উল্টো গালিগালাজ, হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ অবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নেই।’

তিনি বলেন, ‘উক্ত মাদ্রাসা বডিং-এ আমার আরেক ভাগনী ছিল। মুহতামীম মাওলানা আব্দুল লতিফের এমন আচরণের কারণে সে পালিয়ে চলে আসে। বিষয়টি তিনি অস্বীকার করলেও আমরা ঘটনাটি সত্য ছিল বলে বিভিন্নভাবে প্রমাণ পাই।’

এদিকে, অভিযুক্ত মাদ্রাসার মুহতামীম আবদুল লতিফ একেক সময় একেক কথা বলছেন। প্রথমে তিনি বলেন, ‘ভিকটিমকে ৪টি ছেলে রাস্তায় দৌড়াইয়া দেয়, মেয়েটি কান্নাকাটি করে বাসায় যায়। পরে বলছেন, ‘তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমার কাছে পা ধরে মাফ চাইলে আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে। ওই মেয়েটির অভিযোগ মিথ্যা।

দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন বলছেন, অভিযোগ পেয়েছি, যথাযথভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।