বছর পেরোতে না পেরোতেই মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। বেশিরভাগ ঘরেই ঝুলছে তালা। ঘর পেয়ে গৃহহীন পরিবারগুলো যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল, সেখানে আজ অনেকটাই নীরবতা। এমন দৃশ্য দেখা গেছে সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা তাহিরপুরের শিমুল বাগান সংলগ্ন মুজিব পল্লীতে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এর অধীনে প্রথম ধাপে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের শিমুল বাগান সংলগ্ন এলাকায় ৭০টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এর উদ্ধোধন হয়। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি গৃহহীন পরিবারকে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সুবিধাসহ একটি করে সেমি পাকা ঘর প্রদান করা হয়।
সরেজমিনে গেলে দেখা হয় মুজিব পল্লীর ৬৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হিরণ মিয়ার সাথে। তিনি জানান, একটা সময় রাতে ঘুমানোর ঘর ছিল না। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে পরিবারের মানুষ নিয়ে রাতে নির্ভয়ে থাকতে পারছি। তবে এখানে ২০টির মতো ঘর আছে, যেখানে কোনো পরিবার থাকে না। ঘরগুলো সারাক্ষণ তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে।
ঘরগুলো কেন তালাবদ্ধ, কেনই বা উপকারভোগী লোকজন ঘরগুলো রেখে চলে গেছেন- এর কারণ খুঁজতে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। স্থানীয়রা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরগুলো বরাদ্দ প্রদানের সময় সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের খুঁজে বের করার কাজটি করা হয়নি। তাছাড়া যাদেরকে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই উপজেলার অন্য ইউনিয়ন থেকে এখানে এসেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে এসে দীর্ঘদিন কোনো কাজ না পেয়ে বেকার অবস্থায় দিনযাপন করছিল। কর্মহীন থাকার কারণে পরে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই নিরুপায় হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যে কারণে বরাদ্দকৃত ঘরগুলো এখন তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ইউছুবপুর গ্রামের ভূমিহীন পঁচাত্তর বয়সী আব্দুর রশিদ শুরু থেকেই মুজিব পল্লীর ৬১ নম্বর ঘরে থাকছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে আমরা ভূমিহীনরা এখানে আশ্রয় পেয়েছি। কিন্তু কষ্ট লাগে যখন দেখি অধিকাংশ ঘরে এখন তালা ঝোলানো থাকে। ভূমিহীন অসহায় মানুষদের জন্য ঘরগুলো বরাদ্দ হলেও কিছু মানুষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঘর বরাদ্দ নেয়। যে ঘরগুলো রেখে তারা চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম।
উপকারভোগী শিরিন বেগম (৫০) বলেন, শুরু থেকে আমি এখানে থাকছি। আমার ঘরের চালের কাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ আমাদের এখন আর খোঁজ নেয় না। এখানে অনেক ঘর আছে যেগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে। মাঝে-মধ্যে দুয়েকজন এসে কয়েকদিন থেকে আবার চলে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নোয়াজ আলী বলেন, সঠিক জরিপ করে স্থানীয় ভূমিহীনদের মাঝে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হলে এমন বেহাল অবস্থা হতো না। কিছু পরিবার আছে যারা এখানে থাকে না। প্রশাসনের লোকজন আসছে এমন খবর পেলে তড়িঘড়ি করে ঘরে ফিরে আসে। আবার কয়েকদিন পর ঘরে তালা দিয়ে চলে যায়।
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা সিলেট ভয়েসকে বলেন, উপকারভোগীরা ঘরে কেন থাকছেন না বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।