সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের নয় সদস্য তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা উপ পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তারা প্রশাসনকে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাতের নামে পাটলাই নদী থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়, প্রকল্পের কাজ না করে টাকা উত্তোলন, পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইউপি সদস্যদের না বুঝিয়ে মনগড়া হিসাব ও পরিষদের বিভিন্ন কাজে স্বেচ্চাচারিতার নানা বিষয়ে তদন্ত করে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
লিখিত অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের পাটলাই নদী পথে ভারত থেকে প্রতিদিন নৌকা দিয়ে শতশত টন কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি হচ্ছে। এসব কয়লা ও চুনাপাথরবাহী নৌকা থেকে চেয়ারম্যান তার লোকদের দিয়ে পরিষদের উন্নয়নের নামে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন। একটি ৫শত ঘনফুট নৌকা থেকে বিশ টাকা টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও সেখানে নেওয়া হচ্ছে ১৫০টাকা। প্রতিদিন এসব কয়লা ও চুনাপাথরবাহী নৌযান থেকে চল্লিশ হাজার টাকা টোল আদায়ের কথা। কিন্তু সেখানে চার মাসে পরিষদের উন্নয়ন খাতে টোল আয় দেখানো হয়েছে ষাট হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা পরিষেদর উন্নয়ন তহবিলে জমা না করে চেয়্যারম্যান নিজেই আত্মসাৎ করে আসছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, পরিষদের আওতাধীন খেয়াঘাট থেকে পাওয়া ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিষদের উন্নয়ন তহবিলে জমা হওয়ার হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ১লাখ টাকা কম জমা করেছেন। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি নানা প্রকল্পে নিজের লোক দিয়ে কমিটি করে প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে পকেটে ভরেছেন।
আরো বলা হয়েছে, পরিষদের উন্নয়ন খাতে আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চেয়ে পরিষদের ৯জন সদস্য চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করলেও তিনি তা পাত্তা না দিয়ে মনগড়া হিসাব করে পরিষদের উন্নয়ন খাতের নাম ভাঙিয়ে টাকা ভোগ করে আসছেন।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আমির আলী বলেন, পাটলাই গাঙ (নদী) থেকে ইউনিয়নের উন্নয়নের নাম করে যে টাকা তোলা হয় তা ব্যাংকে জমা করা হয় না। তিনি নিজের খেয়ালখুশিমতো ওই টাকা খরচ করেন। হিসাব চাইলে গড়িমসি করে দিন পার করে দেন। তাছাড়া গোদারার (খেয়া ঘাটের) টাকা থেকে তিনি ১লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সাজিনুর মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব হল্ডিং ও পাটলাই নদী থেকে টেক্স তোলে ব্যাংকে জমা করেন না। বিভিন্ন প্রকল্পে নিজের লোকদের দিয়া কমিটি করায়। আমরা ৯ মেম্বার চেয়ারম্যানের এসব অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত(১,২) ইউপি সদস্য মিনারা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের সবাইকে নিয়ে বসে এসব বিষয় মিটমাট করেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন এখন থেকে সব কাজ আমাদেরকে সাথে নিয়ে করবেন।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, হিসাব-নিকাশ আমাদের মনমতো না হওয়ায় অভিযোগ করেছি। চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, এখন থেকে সব কাজ আমাদের সাথে নিয়ে করবেন।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, সাজিনুর মেম্বার একজন মামলাবাজ। তার কাজই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলা। আমি সব মেম্বারদের নিয়ে বসে এসব মিটমাট করেছি। মেম্বাররা বলেছেন, তারা না বুঝে অভিযোগে সই করেছেন। আমার কাছে নদী থেকে টোল তোলে ব্যাংকে জমা করার রশিদ আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানান, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’