টাঙ্গুয়ার হাওর ও যাদুকাটা নদী পরিদর্শনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। গত শুক্রবার ও শনিবার পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র উদ্যোগে টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ বিপর্যয় ও এর সম্ভাব্য প্রতিকার নিয়ে কাজ করতে হাওরটি পরিদর্শন করেছেন পরিবেশবিদদের একটি দল। এছাড়াও তারা যাদুকাটা নদী পাড় কেটে বালু বিক্রি বন্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের নেতৃত্বে পরিদর্শন দলে ছিলেন- পবা’র সম্পাদক এমএ ওয়াহেদ, পবা’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কবি শাহেদ কায়েস, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পরিবেশবিদ আতিকুর রহমান খান পূর্ণিয়াসহ আরও কয়েকজন পরিবেশবিদ ও স্থানীয় পরিবেশকর্মী এবং প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

পরিদর্শন দলটি গত দু’দিন নৌকায় চড়ে যাদুকাটা নদী, ঘাগরাপাড়, ঘাইট্টারপাড়, লাউড়েরগড়, টেকেরঘাট ও টাঙ্গুয়ার হাওরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় স্থানীয় গ্রামবাসী, পর্যটক, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে হাওরে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে মতবিনিময় করেন। দলটি গত শুক্রবার বিকাল চারটায় যাদুকাটা নদীর পাড় কাটা বন্ধ ও ২০টি গ্রাম রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন।

ঘাগটিয়া টেকেরগাঁওয়ের মুরব্বি সামরুজ আলীর সভাপতিত্বে এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, গ্রামবাসীর মধ্যে সাবেক ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন, মো. আবু তোরাব, মো. আস্তারুল, মো. আকাশ মিয়া, আশিক উদ্দিন প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশে গ্রামবাসী তাদের বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে ড্রেজার, বোমা মেশিন দিয়ে নদীর পাড় কাটা হচ্ছে। এতে আমাদের বসত বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালী বালুখেকো চক্র আমাদের মারধর করে এবং মামলার হুমকি দেয়।

সমাবেশে উপস্থিত ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের গৃহিণী রাজিনা বেগম (৫০) বলেন, পাড় কাটতে কাটতে তারা আমার বাড়ির উঠান কাটা শুরু করেছে। আমি বাধা দিলে আমার উপর হামলা করে এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। এখনো তাদের পাড় কাটা চলছেই। যেকোনো মুহূর্তে আমার বাড়িটা নদী গর্ভে চলে যাবে। তিনি তার বসতভিটা রক্ষায় সবার সহযোগিতা চান।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নদীর পাড় কাটায় এই এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অপকর্ম বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ অন্যায় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, ‘নদীর পাড় কাটার কারণে ঘাগটিয়াসহ ২০টি গ্রাম হুমকির মুখে। ইজারার কথা বলে তারা পাড় কাটছে। নদীর পাড় কখনো ইজারা দেওয়া হয় না। এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায় এতে সাময়িকভাবে পাড় কাটা বন্ধ হয়, আবার শুরু হয়। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। দৃষ্টিনন্দন এই নদীর তীরে জিও টেক্সটাইলের ব্যাগ দিয়ে ওয়াল তৈরি করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হলে তীর রক্ষা পাবে এবং পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ হবে।’