জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পন্ন

সিলেটের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের (জেসিপিএসসি) ২১তম আন্তঃহাউস বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩ সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ২টায় সিলেট-তামাবিল বাইপাস রোড সংলগ্ন (বিকেসপি’র বিপরীতে) AIBA এর নির্ধারিত নতুন মাঠে প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ও সিলেট এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী, ওএসপি(বার), এসজিপি, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল।

উপস্থিত ছিলেন জেসিপিএসসি’র পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ পদাতিক বিগ্রেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ মাওলা ডন, এএফডব্লিউসি, পিএসসি।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সামরিক ও অসামরিক অতিথিবৃন্দ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

প্রধান অতিথি উদ্বোধনী মঞ্চে আসার পর প্যারেড কমান্ডার ও কলেজ প্রিফেক্ট দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিম আহমেদ সৌরভের নেতৃত্বে সম্মিলিত মার্চ পাস্ট দলের সদস্যবৃন্দ প্রধান অতিথিকে সালাম ও অভিবাদন জানান। কোরিয়ান মার্শাল আর্ট ‘তায়কোয়ান্ডো’ প্রশিক্ষণার্থী ৬৪ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আত্মরক্ষামূলক শরীরচর্চা কৌশল পরিবেশন করা হয়। ২৭৭ জন শিক্ষার্থী মার্চ পাস্টে অংশগ্রহণ করেন। ৪১২ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ‘আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও অপরাজেয় বাংলা’ শিরোনামে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষার্থীদের বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তোমরা সুশিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি নৈতিকতাবোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আজকের শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু কোমলমতি এই শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক মুখস্থনির্ভর বিদ্যা আর সনদপ্রাপ্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষায় হারিয়ে ফেলছে তাদের উচ্ছল শৈশব-কৈশোর। শেখার আনন্দের বিপরীতে মানসিক চাপে সৃজনশীলতা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। শুধু পাঠ্যপুস্তককেন্দ্রিক পড়াশোনা এবং সর্বোচ্চ জিপিএ পাওয়াই যেন জীবনের লক্ষ্য না হয়; পড়াশোনার উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মশক্তি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করা, অন্তরকে বিকশিত করা। আমার বিশ্বাস খেলাধুলার চর্চা ও অনুশীলন ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে সহায়তা করে। প্রকৃতপক্ষে মানসিকভাবে বিকশিত হলেই তাদের মধ্যে বহুমাত্রিকতাবোধের উন্মেষ ঘটবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে জেসিপিএসসি’র অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মো. কুদ্দুসুর রহমান, পিএসসি বলেন, আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জেসিপিএসসি ‘জ্ঞানে আলোকিত’ মূলমন্ত্র ধারণ করে সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আমরা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলেই শ্রেষ্ঠ নই; শৃঙ্খলা, শিক্ষা, সাহিত্য- সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রয়েছে আমাদের গৌরবদীপ্ত সাফল্য। আমরা বিশ্বাস করি, দেহ ও মনের যুগপৎ শিক্ষাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষাকে জীবনমুখী ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করতে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অর্জন করে প্রফুল্ল মন ও সুস্থ দেহ।

সমাপনী দিনে বিভিন্ন খেলার ইভেন্টের পাশাপাশি ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। দুই দিনব্যাপী ২১তম আন্তঃহাউস বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৬৪টি ইভেন্টে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিযোগী শিক্ষার্থী চূড়ান্তপর্বে অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া পুরুষ অভিভাবকরা ‘বেলুন রক্ষা’ ও নারী অভিভাবকরা ‘পিলো পাসিং’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।

২১তম আন্তঃহাউস বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রামিম শিকদার শ্রেষ্ঠ বালক এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়শা আনিকা এষা শ্রেষ্ঠ বালিকা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়। ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম ও প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পদ্মা হাউসকে ‘শ্রেষ্ঠ হাউস’ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এবং সুরমা হাউসকে রানার আপ হাউস হিসেবে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

জেসিপিএসসি’র দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিশা আনজুম নোভা ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐশিক সাহা যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ লাহিন উদ্দিন এবং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ।