জলে ভাসা আজমিরীগঞ্জ, নামছে পানি বাড়ছে হতাশা

ইসমাইল মিয়া! ছাতা মেরামতের কাজ করেই চলত তাঁর সংসার। দিনরাত পরিশ্রম করে ৭ সন্তানসহ ৯ সদস্যের পরিবারটিকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্মরণকালের বন্যা তাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

এক কাপড়ে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠা ইসমাইল মিয়ার হাড়ি-পাতিলসহ ঘরের আসবাবপত্র ভেসে গেছে বানের জলে। তাই ঘর থেকে পানি নামলেও চারপাশে এখন শুধু হতাশা। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নীড়ে ফিরেছেন ইসমাইলের পরিবার।

ইসমাইল মিয়া বলেন, ‘মাঝ রাইতে হঠাৎ কইরা ঘর পানি ঢুকন ধরে। কোন রকমে রাত কাটাইয়া বউ-পুলাপুরি লইয়া আজমিরীগঞ্জ কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে উটছি। ঘর থাইক্কা কোছতা বাইর করতা পারছি না। সব বন্যায় ভাসাইয়া নিছেগা।’

তিনি বলেন- ‘ছাতা ঠিক (মেরামত) কইরা সংসার চালাই। দুই সপ্তা ধইরা বেকার। অকন বাড়িত গিয়া কেমনকি কিতা করমু বুঝতাছি না। ঘরের তালা-বাসন, বিছানা-টিছানা সব ভাইসা গেছেগা। কিতাযে কিনমু হাত টাকা নাই। কেউ রেইন (ঋণ) দেয় না।’

এ গল্প শুধু হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার জয় নগরের বাসিন্দা ইসমাইল মিয়ার নয়। এমন অসহায়ত্বের গল্প বানভাসি অধিকাংশ পরিবারই। বিশেষ করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বন্যা আক্রান্তদের চিত্র চোখে দেখার মতো নয়! গত ১৭ জুন থেকে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে থাকে।

কালনি-কুশিয়ারার পানি বেড়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে ঢুকে পানি। ১৮ জুন নদীর বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। তীব্র আকার ধারণ করে বন্যা পরিস্থিতি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, হবিগঞ্জের ৭ উপজেলার ৫৪টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ২১০টি পরিবারের ৮৩ হাজার ৪৯০ জন মানুষ। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪৭টি।

তবে, স্থানীয়দের ধারণা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অসংখ্যা আরও কয়েকগুণ। জেলায় অন্তত ৬ লাখের বেশি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আজমিরীগঞ্জ। ভাটি অঞ্চলিয় উপজেলাটির পৌর শহরের কিছু অংশ ছাড়া পুরো উপজেলাই বানের জলে তলিয়ে যায়। উপজেলার ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ পরিবার আশ্রয় নিলেও বাকিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানিবন্দি অবস্থায় বাড়িতেই থাকেন। এখন পানি কিছুটা কমায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বন্যার্তরা।

মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ছাদির মিয়া বলেন- ‘বন্যায় ভিটেমাটি ভেঙে গেছে। মেরামত করতে হলে টাকার প্রয়োজন। কেউ তো ধারও দিচ্ছে না। বাড়ি ঘর মেরামত না করলে থাকবো কই। বাড়িত গিয়াও যে কিতা করমু!’

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা সালেহা সুমী জানান- ‘আমরা আপাতত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছি। পুনর্বাসনের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আমরা কার্যক্রম চালাব।’