প্রতিবন্ধী পিতা কাবির হোসেন সংসারের চাহিদা মেটাতে রোজই ভাড়ায় রিকশা চালান। বাবার সাথে মা তুরুন নেছাও কাজ করেন দিন মুজুরের। তাদেরই নয় বছরের সন্তান নীলুফা।
দীর্ঘজীবন মানুষের পরিত্যক্ত বাড়িতে বসবাস করার পর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন নীলুফার পিতা কাবির হোসেন। নিজেরা লেখাপড়া না করলেও কাবির হোসেন ও তুরুন নেছা সিদ্ধান্ত নেন মেয়ে নীলুফাকে শিক্ষিত করে তুলবেন, নীলুফা সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। এই চিন্তা থেকেই সদর ইউনিয়নের সারদা সুন্দরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান নীলুফাকে। প্রথমবার স্কুলে গিয়ে নীলুফাও ভীষণ খুশি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ নীলুফাকে ভর্তি করে নিয়মিত স্কুলে আসতে বললেও পিতা কাবির হোসেনকে জানান নীলুফার জন্মনিবন্ধন করে স্কুলে জমা দিতে। কারণ পরিপত্রে উল্লেখ করা রয়েছে; স্কুলে ভর্তি, উপবৃত্তি পাওয়া এসব ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এরপর বিগত চারমাস ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিতে দিতে ক্ষান্ত হয়েও মেয়ের জন্ম নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হন কাবির হোসেন ও তুরুন নেছা।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে কথা হয় কাবির হোসেন ও তুরুন নেছার সাথে। কাবির হোসেন আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘দীর্ঘদিন মানুষের পরিত্যক্ত জায়গায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থেকেছি, প্রধানমন্ত্রী ঘর দিসেন, ভাবসিলাম নিজেরা অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি মেয়েটা অন্তত লেখাপড়া শিখে সমাজে মানুষের মত বাঁচুক। কিন্তু জন্মনিবন্ধন করতে হয় কোনদিন জানতাম না। অভাবের কারণে এতদিন মেয়ে স্কুলে ভর্তি করতে পারিনি, এখন মেয়ের বয়স প্রায় নয় বছর। ইউনিয়ন পরিষদে এসেছিলাম মেয়ের জন্মনিবন্ধন করতে, সচিব সাব বলছেন এফিডেফিট করতে- করেছি, এখন বলছেন জেলা শহরের ডাক্তারের প্রত্যায়ন পত্র আনতে হবে। কোনদিন জেলা সদরে যাইনাই কোথায় যেতে হবে, কতটাকা লাগবে তাও জানি না। আমারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দিনমজুরী করি কাজ করতে পারছি না কদিন যাবত। কি করবো বুঝতেছি না।’
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়নের সারদা সুন্দরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা অর্চনা রাণী রায় জানান-আমরা নীলুফাকে স্কুলে ভর্তি করেছি সে নিয়মিত স্কুলেও আসছে। কিন্তু পরিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে ভর্তি এবং উপবৃত্তি পেতে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তাই উনাদের বলা হয়েছে এটা করে যেনো পরবর্তীতে জমা দেন।
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য আক্তার মিয়া জানান- ‘আমি সচিব সাহেবকে সুপারিশ করেছি, কিন্তু আইন বহির্ভূতভাবে তো আর নিবন্ধন করা যায় না।’
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব প্রণতিশ চন্দ্র দাস জানান- পাঁচ বছর পর্যন্ত টিকা কার্ডের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করা যায়। কিন্তু তার বয়স নয় বছর এখন নিবন্ধন করতে হলে জেলা সদর থেকে বাংলাদেশ ডেন্টাল বোর্ডের একটি ডাক্তারের প্রত্যায়ন পত্র আনতে হবে। এ ছাড়া নিবন্ধন সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মোবারুলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।