মোবাইল ফোনে নতুন প্রযুক্তির ই-সিম বা ভার্চুয়াল সিম জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এই সিমের প্রতি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে যারা হাইএন্ডের বা সর্বশেষ নতুন প্রযুক্তির মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তারা ই-সিমের প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন মোবাইল ফোন অপারেটররা।
জানা যায়. গত বছরই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের বাজারে ই-সিমের অনুমোদন দেয়। মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন সবার আগে অনুমোদন নিয়ে বাজারে ই-সিম ছেড়েছে এবং গ্রাহকের আগ্রহ আছে বলে জানিয়েছে।
গ্রামীণফোনের পরে ই-সিম রবি ও বাংলালিংক বাজারে ছাড়ার প্রযুক্তি নিয়েছে বলে জানা গেছে। ই-সিম ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তারপরও ক্রেতারা বিশেষভাবে এই সিমের খোঁজ করছেন বলে জানিয়েছে অপারেটররা।
নতুন নম্বরের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নতুন নম্বরে ই-সিম বিক্রি করতে পারছে না গ্রামীণফোন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন খায়রুল বাসার বলেন, রিসাইকেলকৃত নম্বরে (পুরনো) যদি কেউ ই-সিম নিতে চায়, সেটা সম্ভব। নতুন নম্বরে ই-সিম দেওয়া যাবে না।তবে একজন গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহারকারী যদি তার মোবাইলে ই-সিম নিতে চান তাহলে তিনি তা পারবেন।
জানা গেছে, ই-সিমের প্রতি মোবাইল গ্রাহকদের আগ্রহ রয়েছে। এই সিম জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। প্রায় ৫ লাখের মতো ডিভাইসে গ্রামীণফোনের ই-সিম ব্যবহার হচ্ছে। গ্রামীণফোন সেন্টারে গেলে ই-সিম নেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে রবির প্রস্তুতি জানতে চাইলে অপারেটরটির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, রবি এ বিষয়ে কাজ করছে এবং আশা করছি গ্রাহকরা খুব শিগগিরই এ সেবা পাবেন।
বাংলালিংকও প্রস্তুতি নিচ্ছে ই-সিম বাজারে ছাড়ার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেটরটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স ও সাস্টেনিবিলিটি আংকিত সুরেকা বলেন, আমরা ই-সিমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিগগিরই আমরা ই-সিমের বাজারে প্রবেশ করবো। সাধারণত হাইএন্ডের ফোনগুলো ই-সিম সমর্থিত। দেশে ই-সিম এনাবল যতগুলো ডিভাইস রয়েছে সেগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে এটার ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
ই-সিম হলো ভার্চুয়াল বা এম্বেডেড সিম। এটা এমন এক ধরনের সিম যেটা ব্যবহার করতে ফোনে কোনও ধরনের সিম কার্ড মোবাইল সেটে ঢুকাতে হয় না। এতে প্লাস্টিকের ব্যবহারও কম হয়। ই-সিম ব্যবহার করতে হলে পছন্দ মতো যেকোনও অপারেটরের একটা প্ল্যান বেছে নিতে হবে। তারপর একটা মোবাইল নম্বর বাছতে হবে না (পুরনো নম্বরে করতে চাইলে নম্বর বাছতে হবে না)। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন পদ্ধতি সম্পন্ন করে হ্যান্ডসেটে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করতে হবে। সিম কিটে দেওয়া কিউআর কোড স্ক্যান করে তারপর মোবাইল সেট অনুযায়ী ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।
আইফোন, স্যামসাং, গুগল পিক্সেল ও মটোরোলার কয়েকটি মডেলের ফোনে ই-সিম ব্যবহার করা যাচ্ছে। এছাড়া আইপ্যাড প্রো, অ্যাপল ওয়াচের সব সিরিজ, স্যামসাং গ্যালাক্সি স্মার্ট ওয়াচ ও হুয়াওয়ের স্মার্ট ওয়াচে ই-সিম ব্যবহার করা যাচ্ছে। অনেক ডিভাইসেই সিম কার্ড ও ই-সিম ব্যবহারের সুযোগ থাকে। কোনোগুলোতে শুধু ই-সিম ব্যবহারেরই সুযোগ থাকে। ফলে ফোন কেনার আগে বিষয়গুলো দেখে নেওয়া জরুরি।
রয়েছে সীমাবদ্ধতাও
ব্যবহারকারীরা বলছেন,ই-সিমে অনেক সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতে যেহেতু সিম লাগানোর ব্যাপার নেই, ফলে কোনও কারণে মোবাইল ফোন বদলালে সিম খুলে নতুন বা অন্য ফোনে লাগানো যাবে না। ফোন সেটে সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা (সংখ্যার দিক থেকে) রয়েছে। ফলে কখনও সেট পরিবর্তন করতে গেলে, সেট হারিয়ে গেলে, চুরি হলে বা নষ্ট হলে মোবাইল ফোন অপারেটরের সহযোগিতা নিতে হতে পারে।