ছেলেকে সৌদি পাঠিয়ে বিশ্বনাথে মায়ের হাহাকার

রুবেল আহমদ

বাঁশের খুঁটি আর টিন দিয়ে নির্মাণ করা বসবাসের ঘর। আর এই ঘরের বারান্দায় বসে বাঁশ দিয়ে খলই, কুলা এবং টুকরি তৈরি করে কিছু টাকা উপার্জন করেন এক অসহায় মা।

তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মৃত মছরব আলীর স্ত্রী বৃদ্ধা আফিয়া বেগম। বাঁশের তৈরি এসব খলই, টুকরি, কুলা, গরুসহ সহায়-সম্বল বিক্রি করে বড় ছেলে রুবেল আহমদকে (২৪) দালাল মারফত সৌদি আরবে পাঠান।

এখন ছেলের উপার্জনের টাকা খাওয়া তো দূরের কথা, তার আম-ছালা দুটিই হারানোর পথে। স্থানীয়দের বিচার-সালিশে ব্যর্থ হয়ে তিনি আইনের আশ্রয়ও নিয়েছেন।

অসহায় আফিয়া বেগম জানান, প্রায় ৬ মাস পূর্বে আজিজনগর গ্রামের মৃত কলমদর আলীর ছেলে গৌছ আলীর মাধ্যমে তিনি তার ছেলে রুবেল আহমদকে সৌদি আরব পাঠান। এতে দালালকে তিনি প্রায় ৪ লাখ টাকা দেন। কথা ছিল আকামা লাগিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার পর ঘর মোছার কাজ করবে; কিন্তু দালাল তার ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দিলেও কোনো কফিলের কাছে দেয়নি অথবা আকামাও দেওয়া হয়নি। সেখানে উল্টো তাকে জিম্মি করে আকামার জন্য মারধর করে ২ লাখ টাকা দাবি করছে দালালের লোক।

এমন একটি ভিডিও রেকর্ড করে তার দুঃখের কথা মায়ের কাছে পাঠিয়েছেন রুবেল আহমদ। কাজ না থাকায় সেখানে রুবেল আহমদ খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছেন। তাই খলই, টুকরি বিক্রি করে দেশ থেকে ছেলের খাবারের টাকা পাঠিয়ে দেন। ছেলের এমন খবর পাওয়ার পর দালালের কাছে গেলে দালাল নানা টালবাহানা করে।

একাধিকবার এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বিচার-বৈঠক করে কোনো ফলাফল আসছে না। অবশেষে তিনি অসহায় হয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশমতে তিনি একই দিনে বিশ্বনাথ থানায় গৌছ আলীকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অসহায় নারীর অভিযোগটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন বলে জানান এসআই গাজী মোয়াজ্জেম হোসেন।

অভিযুক্ত গৌছ আলী বলেন, আমার মধ্যস্থতায় আমতৈল গ্রামের দালাল নুরুল হকের মাধ্যমে রুবেল আহমদকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আমি জানার পর দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে আকামা দেওয়ার চেষ্টা করেছি; কিন্তু রুবেল আহমদ অন্যত্র চলে যাওয়ায় আর আকামা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র : যুগান্তর