হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় বরাদ্দের স্থবিরতায় আটকে আছে বীর নিবাসের নির্মাণকাজ। এমন বাস্তবতায় আক্ষেপ নিয়েই এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের অস্থায়ী ঘরে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন। এসবের পাশাপাশি নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় সামনের ঝড়বৃষ্টির সময় আরও কঠিন দুর্ভোগে পড়তে হবে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের।
জানা যায়, সময়মত বরাদ্দ না আসায় এ উপজেলায় আটকে আছে ১০টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিন যাবত কাজ বন্ধ থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলো অস্থায়ী ঘরে খুব কষ্টে দিনযাপন করছে। এরই মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। কাজ সঠিক সময়ে না হওয়ার কারণে বীর নিবাসে ঘুমানোর আক্ষেপ নিয়েই মারা যান ওই মুক্তিযোদ্ধা।
তথ্যমতে ২০২২ সালের জুলাই মাসে দুটি প্যাকেজে দুজন ঠিকাদার উপজেলায় ১০টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পিডব্লিউডির ২০১৮ সালের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রত্যেকটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৬২ টাকা।
২০২১ সালে দরপত্র হলেও কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। দু’মাসের মধ্যেই ঘরের ছাদ লেভেল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী লিন্টেল পর্যন্ত বাস্তবায়ন করে ঠিকাদাররা যথারীতি ২৫ শতাংশ বিল দাখিল করেন; কিন্তু বরাদ্দ নেই বলে অদ্যাবধি বিল পাননি ঠিকাদাররা।
এছাড়া বৈশ্বিক মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে ধাপে ধাপে নির্মাণ সামগ্রীর রেট বেড়ে গেলেও সিডিউল হালনাগাদ করা হয়নি। এ অবস্থায় বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অস্থায়ী ঘরে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন। এদিকে সামনে ঝড়বৃষ্টির সময় আরও কঠিন দুর্ভোগে পড়বে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
এরই মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নের পাচারগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ মিয়া মারা যান। বীর নিবাসে না থাকার আক্ষেপ নিয়েই তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন বলে আক্ষেপ প্রকাশ নিকটাত্মীয়দের। বর্তমানে এ পরিবার একটি ভাঙা ঘরে খুব কষ্টে দিনযাপন করছে।
এ বিষয়ে আলাপচারিতায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে কবির মিয়া জানান, ‘আমরা একটি ভাঙ্গা ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। সামনে ঝড় তুফানের সময় কোথায় থাকব জানি না।’
এ বিষয়ে সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ জানান, বরাদ্দ না থাকায় ঘরের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার পরিজন অত্যন্ত কষ্টে রয়েছে। তিনি দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প কমিটির সভাপতি সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, দ্রুত বরাদ্দের জন্য প্রকল্প পরিচালকের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।