চা শ্রমিকদের আন্দোলনে প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের সংহতি

চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৩০০ টাকা করার আন্দোলনের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ২০২১-২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

রোববার (১৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে অবিলম্বে ২০২১-২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৩০০ টাকা করার আন্দোলনের দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানান তারা।

বিবৃতিদাতারা হলেন- সিলেট জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাসদ জেলা সভাপতি লোকমান আহমেদ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্ল্যাহ শহিদুল ইসলাম, সিপিবি জেলা সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, সাম্যবাদী দল জেলা সম্পাদক ধীরেন সিং, সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ,আইডিয়া’র নির্বাহী প্রধান নজমুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অম্বরিষ দত্ত, ঐক্য ন্যাপ সিলেট জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র পাল, ন্যাপ জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ মতিন, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি সিকান্দর আলী, বাসদ জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) জেলা সভাপতি সিরাজ আহমদ, গণতন্ত্রী পার্টি জেলা সাধারণ সম্পাদক জুনেদুর রহমান চৌধুরী, জাসদ জেলা সাধারণ সম্পাদক কে এ কিবরিয়া, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান, ঐক্য ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বাবুল, জাসদ মহানগর সাধারণ সম্পাদক গিয়াস আহমদ, সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা আহ্বায়ক সুশান্ত সিনহা সুমন, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা নেতা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ শোয়েব, বাসদ জেলা নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা নেতা অ্যাডভোকেট রণেন সরকার রনি প্রমুখ।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য দুই বছর অন্তর অন্তর মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন হয়। এই চুক্তি নিয়ে সবসময় মালিকপক্ষ টালবাহানা করে। দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থাকাকালীন সময়ে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অনেক ছলচাতুরির মাধ্যমে মজুরি মাত্র ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেই ২০১৯-২০ সালের চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে ১৭ মাস আগে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ সালের চুক্তির কোনো উদ্যোগ নেয়নি মালিকপক্ষ। চুক্তি দেরিতে হলে স্থায়ী শ্রমিক এরিয়ার বিল পেলেও অস্থায়ী শ্রমিকরা তা পান না। সেই ক্ষোভ থেকেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন চা শ্রমিকরা।
চা শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি দাবি করছেন ৩০০ টাকা। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সব সেক্টরের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। চা বাগানের ক্ষেত্রে অবস্থা আরও অমানবিক, নাজুক। বর্তমান বাজারের সাথে চা শ্রমিকদের এই মজুরি গ্রহণযোগ্য তো নয়ই, বরং অযৌক্তিক ও অন্যায়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে শ্রমিক পরিবারের নুন্যতম শারীরিক চাহিদা পূরণ, জীবনযাত্রার খরচ, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, পোশাকসহ আনুসাঙ্গিক খরচ ইত্যাদি বিচার-বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিউট হিসেব করে দেখিয়েছে ৫ সদস্যের একটি পরিবারের নুন্যতম খাবারের জন্য ৬২৫ টাকা দরকার হয়, যা বর্তমান জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আরও বেড়েছে। চা-বাগানের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একটি পরিবার ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি ছাড়া নূন্যতম মানবিক জীবনযাপন করতে পারে না। তাই সেই প্রেক্ষাপটে বর্তমানে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি করার আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। কিন্তু মালিকপক্ষ বিভিন্ন গোঁজামিল ও ফাঁকির হিসাব দিয়ে তা প্রত্যাখান করছে।

চা শ্রমিকদের তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলন শক্তিশালী করার এবং তাদের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে ২০২১-২০২২ সালের চুক্তি সম্পাদন করে চা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।