টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে শক্তিশালী ভারতকে হারাতেই হবে বাংলাদেশকে। আজ বুধবার দুপুরে অ্যাডিলেড ওভালে ভারতের মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসানের দল। এই ম্যাচে ভারতকে ফেভারিট ঘোষণা করে নিজেদের চাপমুক্ত করে রেখেছে তারা। ‘চাপমুক্ত’ বাংলাদেশ অ্যাডিলেডে কি পারবে স্বপ্নের ফানুস ওড়াতে।
দিবা-রাত্রির ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে। ম্যাচ সরাসরি দেখা যাবে টি-স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশনে।
অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে এই মাঠেই শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। পুরনো সুখস্মৃতি অবশ্য নতুন ম্যাচে তেমন একটা কাজে দিচ্ছে না। তবু এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় সাকিব আল হাসান ও তাসকিনের জন্য কিছুটা বাড়তি সুবিধাতো থাকবেই। অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ দলগত পারফরম্যান্সে জ্বলে উঠলে জয় অসম্ভব নয় বলে মনে করেন অধিনায়ক সাকিব, ‘কোন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয় পাওয়াটা সবসময়ই আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে। আমরা স্বস্তি বোধ করছি। যদিও ভারত বড় দল। দল হিসেবে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে জয় অসম্ভব নয়।’
ম্যাচের আগের দিন স্পষ্ট করেই ভারতকে ফেভারিট ঘোষণা করেছেন সাকিব। দেওয়াইর কথা। কেননা পরিসংখ্যানের বিচারে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য। দুই দল কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ১১বার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে ১০বার জিতেছে ভারত। ২০১৯ সালে দিল্লিতে মুশফিকের ব্যাটে একমাত্র জয়টি এসেছিল। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় সবগুলোই জিতেছে রোহিত শর্মার দল। এমন পরিস্থিতিতে সাকিব ভারতকে ফেভারিট বলতেই পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, নিজেদের চাপমুক্ত রাখতেই মেন্টাল গেম খেলেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ভারতের বিপক্ষে মাঠের লড়াইয়ের আগে ‘ভিন্ন’ লড়াই দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছেন তিনি।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেছেন, ‘ভারত ফেভারিট টিম। তারা বিশ্বকাপ জিততেই এসেছে। আমরা ফেভারিট না, এখানে বিশ্বকাপ জিততে আসিনি। ভারতের বিপক্ষে আমরা যদি জিততে পারি, তাহলে এটি অঘটন হবে। আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করবো। আর অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করবো। অঘটন ঘটাতে পারলে আমরা খুশি। না করতে পারলেও খুব বেশি কিছু বলার নেই।’
বাংলাদেশের অধিনায়ক ভারতকে ফেভারিট ঘোষণা করলেও তা মানতে নারাজ ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। বাংলাদেশকে সমীহ দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা ভালো দল। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে কেউই ফেভারিট নয়। ম্যাচের দিন যে দল ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে বা বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচেও উত্তেজনার কমতি থাকছে না। সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। ম্যাচের আগের দিন থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। ম্যাচের দিনও শঙ্কা আছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। ওখানকার তাপমাত্র ১৪ ডিগ্রি। বৃষ্টি নামলে সেটি আরও নেমে যেতে পারে। সবমিলিয়ে কঠিন কন্ডিশন বাংলাদেশের জন্য। ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় অবশ্য জানিয়ে গেছেন আবহাওয়া নিয়ে তাদের খুব একটা ভাবনা নেই, ‘এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যা হবে, সেভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে।’
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও ভারত তিন ম্যাচ খেলে একটি করে ম্যাচ হেরেছে। পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে এগিয়ে রয়েছে রোহিত শর্মার ভারত। সেমিফাইনালের পথে দুই দলেরই জয়ের বিকল্প নেই। তারকা সমৃদ্ধ এমন ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে শক্ত বোলিং আক্রমণ নিয়ে মাঠে নামার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে তাসকিন, মোস্তাফিজ, হাসান মাহমুদের সঙ্গে চতুর্থ পেসার হিসেবে এবাদতকে বিবেচনা করা হলে দারুণ কম্বিনেশন সেট হতে পারে। কেননা বৃষ্টি আর মেঘের দাপটে অ্যাডিলেডে সূর্যেরই দেখা মেলেনি। ফলে ওখানে পেসারদের আধিপত্য থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
যদিও অধিনায়ক সাকিব জানিয়েছেন, চার পেসার নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। হয়তো অ্যাডিলেডে নেদারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রথম ম্যাচের পর উইকেটের আচরণ দেখে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। সাকিব বলেছেন, ‘আমি আসলে এখনও চিন্তা করিনি সত্যি কথা বলতে। কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোচ কিছু বলেছে কিংবা অন্যান্য আরও দুই-একজন বলেছে। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত ওভাবে কিছু চিন্তা করিনি। আমার মনে হয়, একটু অপেক্ষা করে চিন্তা করাটাই ভালো।’
শেষ পর্যন্ত বাড়তি একজন পেসারকে দলে নিলে কাটা পড়তে পারেন ইয়াসির আলী রাব্বি অথবা উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসানে সোহান। ইয়াসিরের বাদ পড়ার সম্ভাবনাই বেশি! আবার উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবে কিনা সেটা নিয়েও দ্বিধায় আছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কেননা নেদারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়া ম্যাচ দুটিতে খেলেছে একই দল, ‘আসলে অনেক কিছু মাথায় রাখতে হবে দল নির্বাচনের জন্য। আমি যেটা আগেও বলেছি, যেই দলই নির্বাচন করি, আমি আশাবাদী তারা ভালো খেলবে। একটা জিনিস হচ্ছে, এই দল দুইটা ম্যাচ জিতেছে। (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) একটা কম্বিনেশন আমরা গড়েছি, সেটা কাজে আসেনি। আমরা আবারও সেরকম কোনও কম্বিনেশন করবো কিনা তা চিন্তার বিষয়।’
কম্বিনেশন যাই হোক না কেন, দলগত পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। ব্যাটিং অর্ডারে শান্ত-সৌম্যকে শুরুতেই ভারতের বোলারদের বিপক্ষে ভালো পুঁজি এনে দিতে হবে। এরপর লিটন-সাকিবের ব্যাটিংটা হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ। বোলারদের ক্ষেত্রে তাসকিন ও মোস্তাফিজকে মূল রোল প্লে করতে হবে। মোস্তাফিজ গত দুই ম্যাচে প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ভারতের বিপক্ষে কঠিন ম্যাচটিতে ‘আসল’ মোস্তাফিজের দেখা পেতেই হবে। রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের অফফর্ম বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হলেও সূর্যকুমার যাদব ও বিরাট কোহলিকে আটকানোর পরিকল্পনা নিতে হবে। ঠিকঠাক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই দিল্লির সুখস্মৃতি ফেরানো সম্ভব অ্যাডিলেডে। নয়তো বেঙ্গালুরু কিংবা ঢাকার মতোই হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন