সীমান্তবর্তী জেলা চা-বাগান ও হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে আশঙ্কাকাজনকভাবে কুষ্ঠ রোগ বেড়েই চলেছে। দেশের ৯টি জেলায় এই রোগের প্রকোপ বেশি। এর মধ্যে মৌলভীবাজার রয়েছে তালিকার এক নম্বরে। জেলায় কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে লেপরা বাংলাদেশ ও সিভিল সার্জন অফিস।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজার ইপিআই ভবনে সাংবাদিকদের নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদের সভাপতিত্বে লপ্রেসি (কুষ্ঠ) রোগ বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার বেলায়েত হোসেন, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়, জেলা সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
সভায় জানানো হয়, জেলায় এক লাখ মানুষের মধ্যে শতকরা ৫ জনের বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগ হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। রোগটি নির্ণয়ে দেরি হওয়ার কারণ হলো রোগটি দেরিতে ধরা পড়ে। এ রোগে আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে আশঙ্কাকাজনক বিষয় হলো দেশের ৯টি জেলায় এই রোগের প্রকোপ বেশি। তার মধ্যে মৌলভীবাজার রয়েছে এক নম্বর তালিকায়। এর মূল কারণ হলো এ জেলায় চা-বাগান বেশি। এসব বাগানের অধিকাংশ লোকজন অসচেতন। তাদের মধ্যে অনেকেই ভুগছেন অপুষ্টিতে, রয়েছে বসবাসের অনুপযুক্ত পরিবেশ। যার কারণে চা-বাগানে এই রোগের প্রকোপ বেশি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে ৬৬০ জন কুষ্ঠ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৩৭ জন শিশু রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কুলাউড়া উপজেলায়, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২শ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ জন রাজনগর উপজেলায়। এর মধ্য ৯৮ শতাংশ আক্রান্তদের অবস্থান চা বাগান এলাকায়।
জানা গেছে, গতবছর জেলায় ২০ হাজার জন রোগীদের পরীক্ষা করে ১ শত ৭৯ জন কুষ্ঠ রোগী আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই রোগ নির্মূলে কাজ শুরু করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এই রোগ সম্পূর্ণ নির্মূলে কাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা মতামত ব্যক্ত করে জানান, যেহেতু রোগটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় সেহেতু মাস্ক পরলে এ রোগ থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি চা-বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাসহ রাজনৈতিক, সামাজিক সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় বাজেট, লোকবল বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সভায় আরও বক্তব্য দেন লেপরা বাংলাদেশের প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউর রহমান ও ডা. আব্দুল্লাহ আল জিয়া।