কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে সোমবার (১৭ এপ্রিল) ইফতারের পূর্বমুহূর্তে রোজিনা বেগম (২৫) নামক এক গৃহবধূকে স্বামী ও শ্বশুর মিলে অমানবিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি নিয়ে রাতেই তোলপাড় শুরু হয়। অনেকে এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেন।
এদিকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে গৃহবধূ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ২৪ ঘন্টায় মধ্যেই নির্যাতিত গৃহবধূর শ্বশুর সফিক মিয়া (৬৩) ও স্বামী আব্দুস সালাম (৩২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে গৃহবধূর শ্বশুর মো. সফিক মিয়া তার পুত্রবধূকে অশ্লীল গালি-গালাজ করে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে একটি বাড়ির উঠান থেকে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই বাবুল মিয়া মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
সেখানে তিনি জানান, গত প্রায় ০৪ বছর আগে ভিকটিম রোজিনা বেগমকে সুলতানপুর গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে আব্দুস সালামের নিকট বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ৩ বছরের ১টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকেই ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালাম যৌতুকের জন্য ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। কিন্তু ভিকটিমের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে যৌতুকের দাবী পূরণ করতে পারেননি।
ভিকটিমের ভাই বাবুল মিয়া জানান, গত ১৬ এপ্রিল সুলতানপুর ভিকটিমের শ্বশুরবাড়িতে ইফতারের শরবতের প্যাকেট কাটাকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সাথে ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালাম ও তার দেবর রুমান মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ভিকটিম রোজিনা বেগমকে তার শ্বশুর ও বাড়ির লোকজন এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এর পরের দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৬টায় ভিকটিমকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুক বাবদ ০১ লক্ষ টাকা এনে দিতে বলে। ভিকটিম যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে এলাপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। ভিকটিম প্রাণের ভয়ে প্রাতিবেশী জ্যোৎস্না বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নিলে তার শ্বশুর এবং স্বামী ভিকটিমকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করে চুলের মুটি ধরে মাটিতে ফেলে টেনে হিচড়ে তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায়।
এ সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের ভাই এবং আত্মীয় স্বজন তাকে উদ্ধার করতে গেলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদেরকে গালি-গালাজ করে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে কুলাউড়া থানার এসআই (নিরস্ত্র) হারুনুর রশিদ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত আড়াইটায় সুলতানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমের স্বামী আব্দুস সালামকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামি আব্দুস সালামকে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার মূল হোতা আসামি সফিক মিয়াকে মৌলভীবাজার সদরের একাটুনা গ্রামের তার মেয়ের জামাই শামসুল মিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেব নাথ জানান, এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।