‘কামরান ছিলেন সিলেটের রাজনীতির মহানায়ক’

মৃত্যুর চারবছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শনিবার (১৫ জুন) ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর একটি কনভেনশন হলে এ স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। কামরানের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মরে গেলে মানুষ ভুলে যায় এমনটাই হয়েছে সিসিকের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বেলায়। তার স্মৃতিচারণে আমাদের যত অবহেলা।’

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সিলেটের ১৯টি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গণসংবর্ধনা প্রদান করেন তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান। অথচ মারা যাওয়ার ৪ বছর হয়ে গেছে তাকে স্মরণ করার কেউ ছিলো না। দীর্ঘদিন পর আজ এই কলঙ্ক মুছন করলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ জন্য তার প্রতি আমাদের সকলের কৃতজ্ঞতা। সিলেট আওয়ামী লীগের জন্য কামরানের অবদান ভুলে যাওয়ার মত নয়। তিনি মরে গিয়েও অমর হয়ে আছেন সিলেটবাসীর কাছে।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি বলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সদা হাস্যজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আমাদের মাথার ছাঁয়া। সিলেটের রাজনীতিতে আমাদের মহানায়ক ছিলেন তিনি। তার শূন্যতা কোনদিন পূরণ হবার নয়।

তিনি আরও বলেন, কামরান ভাই ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সবার নেতা। তিনি সমগ্র দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। জনতার মেয়র হিসেবে তিনি পরিচিত। সিলেটবাসী চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে তাকে স্মরণ করবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ২০ নং আজাদুর রহমান আজাদ, ০৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, ৩৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফুয়জুল আনোয়ার আলাউর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রুহুল আনাম মিন্টু, ওয়াকার্স পার্টি নেতা সিকন্দর আলী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতা শামসুল বাসিত শেরো, বিশিষ্ট সাংবাদিক আল আজাদ, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরের সভাপতি হাবিব আহমদ শিহাব। সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দজী মহারাজ।

কামরানের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কামরান পত্নী আসমা কামরান ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু। তাদের আবেগঘন বক্তব্যে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। বক্তরা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনী নিয়ে স্মারক গ্রন্থ, ছড়ারপার রাস্তা তার নামে নামকরণ ও নগর ভবন চত্ত্বরকে ‘জনতার কামরান চত্ত্বর’ বাস্তবায়ন করার জোর দাবি জানান।

দাবির প্রেক্ষিতে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ঈদের পরেই বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনী নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়া এবং তার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

সাংস্কৃতিককর্মী রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত করেন শেখ ঘাট জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব খলিলুর রাহমান। পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন সিসিক কর্মকর্তা চন্দন দাস। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের জীবনী নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। তার সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

গত ২০২০ সালের ১৫ জুন মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর এটি প্রথম কোন স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হলো।