সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির মাসিক সভায় সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক চোরাচালান ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধসহ আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনা হয়েছে।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১১টায় উপজেলা সভা কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী।
আইন-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় জনপ্রতিনিধি, কমিটির সদস্যরা বলেন, কানাইঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় আবারো ব্যাপক হারে চোরাচালান কর্মকান্ড বেড়েছে, চোরাকারবারীরা ভারত থেকে প্রতিদিন চিনি, বিড়ি, শুটকি, মোবাইল সেট, সুপারি, মাদকদ্রব্য সহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে আসছে। চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি ও থানা পুলিশকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়াও সভায় সম্প্রতি শিয়ালাইন বিল (জলমহাল) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চতুল এলাকা ও গাছবাড়ী এলাকার বিভিন্ন গ্রামের লোকজন মুখামুখি অবস্থান নেওয়ায় এ নিয়ে যাতে করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য থানা পুলিশের নজরদারী বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেই সাথে সম্প্রতি ভারতীয় মাদকদ্রব্য উদ্ধার নিয়ে পৌরসভার কাউন্সিলর জমির উদ্দিনকে এক মাদক ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান এবং পৌর শহর সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় চিনি পরিবহনের সময় দুর্বৃত্তরা কর্তৃক মাঝে মধ্যে চিনি সহ চোরাই পণ্যসামগ্রী ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
এছাড়াও রাস্তা-ঘাট থেকে টাকা-পয়সা ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া সহ ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভারতীয় চিনির বস্তা লুট, সিদকে চুরি বৃদ্ধি এবং মাদকদ্রব্যে বেঁচা-কেনা সহ আসক্তির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় অনেকে আলোচনা করেন।
সাতবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তায়্যিব শামীম তার ইউনিয়নে মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ী ইসমাইলকে গ্রেফতার করে এলাকায় মাদকের আগ্রাসন বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আফসার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, পুলিশের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। তার ইউনিয়নে বিট পুলিশিং এর সভা হচ্ছে না।
সভায় আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কানাইঘাটে যাতে করে কোন ধরনের নাশকতা মূলক কর্মকান্ড সংগঠিত না হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ রাজনৈতিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় থানার ওসি (তদন্ত) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, বিগত মাসে থানায় বিভিন্ন অপরাধে নিয়মিত ২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিরোধী দলের হরতাল ও অবরোধের কারনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ব্যাপক তৎপর থাকায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে এবং এসব অপরাধের সাথে জড়িতদের অনেককে আটক করা হয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান।
চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় সুরইঘাট ও সোনারখেওড় বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি হিমশিম খাচ্ছে। সীমান্ত এলাকাগুলো দুর্গম হওয়ার কারনে বিজিবি স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারছে না। যার কারনে চোরাকারবারীরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চিনি, মাদক সহ নানা প্রকার মালামাল নিয়ে আসলেও বিজিবি সব-সময় চিনি, মাদক, পাতার বিড়ি, চা-পাতা আটক করে যাচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি ও থানা-পুলিশকে আরো কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন এবং এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক মহল ও সচেতন মহল প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান করেন। সেই সাথে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কানাইঘাটের সুন্দর পরিবেশ কেউ বিনষ্ট করতে না পারে এজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তারা।
আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ, পৌর মেয়র লুৎফুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম, বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, ৯টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানবৃন্দ, কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।