সুরমা ও লোভা নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকন্ঠা।
বিগত বছরে স্মরণকালের ২ দফা ভয়াবহ বন্যায় সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ডাইকে ভাঙন দেখা দিলেও জরুরী ভিত্তিতে অনেক ভাঙন এলাকা মেরামত না হওয়ায় লোকালয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি প্রবেশ করছে।
গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ৩নং দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এরমধ্যে সুরমা নদীর তীরবর্তী দর্পনগর, জিৎপুর গ্রামে ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিলেও জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত এলাকায় মেরামত ও বেড়ি বাঁধ দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় গত কয়েক দিন ধরে টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দর্পনগর, জিৎপুর সুরমা নদীর তীরবর্তী বাঁধে অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙন কবলিত এলাকা দিয়ে ফসলি মাঠ ও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরীসহ অনেকে।
এদিকে বন্যা দেখা দিলে পাহাড়ি ঢলের কারণে যেকোন সময় পুরো জিৎপুর সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা জুড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিতে পারে। পাহাড়ি ঢল নামলে পুরো এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও শত শত একর ফসলি মাঠ পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা।
গত সোমবার দর্পনগর জিৎপুর এলাকার সুরমা ডাইকে ভয়াবহ ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি ও সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ সহ বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত বছরের ভয়াবহ বন্যায় তার ইউনিয়নের সুরমা ডাইকে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এরমধ্যে দর্পনগর, জিৎপুর সুরমা ডাইকে ভয়াবহ ভাঙন কবলিত এলাকা জরুরী ভিত্তিতে মেরামত ও বেড়িবাঁধ স্থাপনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিলেট-৫ আসনের এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়ে তার ইউনিয়নসহ কানাইঘাট উপজেলার বড় অংশকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে দাবী জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোন কাজ হয়নি, যে কারণে সুরমা নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে তার ইউনিয়নের সুরমা নদীর ভাঙন কবলিত দর্পনগর, জিৎপুর এলাকা দিয়ে বানের পানি লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে পানি বাড়ার সাথে সাথে তার ইউনিয়ন পুরো এলাকা বন্যায় কবলিত হবে।
এদিকে জানা গেছে, বিগত বছরের ভয়াবহ বন্যায় কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের গৌরিপুর ও লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি সুরমা ডাইকের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় বড় ভাঙনের কারণে পুরো উপজেলায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত স্থান মাটির বাঁধ দিয়ে সড়ক ও ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা ফেলার কথা থাকলেও কাজের ঠিকাদার ২৭ লক্ষ টাকার মধ্যে নামমাত্র মাটির কাজ করে কিছু বালুর বস্তা ফেলে অবশিষ্ট বালুর বস্তা না ফেলে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে উধাও হয়ে গেছেন। যে কারণে সুরমা নদীতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামলে যে কোন সময় আবারো ভাঙন দেখা দিতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ডাইকে নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। টানা ভারি বর্ষণের কারণে কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে আগাম বন্যার প্রস্তুতি উপজেলা প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। তিনি দিঘীরপাড় পূর্ব ও সাতবাঁক ইউনিয়নের সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন। বিগত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ভাঙন কবলিত অনেক এলাকা জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা মেরামত ও কোথাও সুরমা ডাইকে ভাঙন দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।