করোনাকালীন হতাশা কাটিয়ে জানভি এখন স্বাবলম্বী

শারমিন জানভি। সিলেটের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ঘরে বসে অনলাইনে কাপড় ও খাবার বিক্রি করে থাকেন।

তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি এইচএসসি পাশের পর আড়ংয়ে খন্ডকালীন চাকুরি করেন। এরপর ২০১৪ সালে ব্যাংকে কর্মরত থাকার পর বৈশ্বিক করোনা মহামারির সময় সে চাকুরিও ছেড়ে দেন।

ঘরে বসে বেকার জীবনে হতাশায় ভোগছিলেন তিনি। পরে মা, ভাই-বোন ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় ক্ষুদ্র ব্যবসায় যুক্ত হবার উদ্যোগ নেন।

জানভি’র মা বিলকিস আক্তারের একটি কাপড়ের ব্যবসা ছিল। ২০১০ থেকে বিলকিস আক্তার ১০ হাজার টাকা দিয়ে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। তার শুরু করা ব্যবসায় একসময় হাল ধরেন মেয়ে জানভি। তখন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস।

চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা পেশায় নিজেকে জড়িয়ে হতাশার বদলে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন। শুরুর দিকে ২০২১ সালে মণিপুরী পাঞ্জাবি, টু-পিস, থ্রি-পিস এবং বাচ্চাদের জামা নিজে তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করেন। সে যাত্রায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে লন্ডন, আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, ইতালিসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে ব্যাপক সাড়াপান। তিনি সুনিপুণ কারিগরি হাতে এখনও মণিপুরি কাপড় তৈরির কাজটা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাশাপাশি তিনি মায়ের কাপড় আর খাবারের ব্যবসা এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন। ‘সামায়রা পিঠাঘর’ নামে অনলাইন পেজ ব্যবহার করে দেশীয় ঐতিহ্যগত পিঠা তৈরি করে ইতোমধ্যে শ্রুতি পিঠা উৎসবে সিলেটে টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় পিতা উৎসব-২০২৪ এ তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেন। মা এবং মেয়ে মিলে সর্বোচ্চ ৬০ ধরনের পিঠা প্রদর্শন করে এ পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নকশী পিঠা, মাছ পিঠা, পাটিসাপটা, সবজি কুন পিঠা, শুটকি পিঠা, দুধপুলি ইত্যাদি।

তার বানানো হরেক রকম পিঠাপুলির মধ্যে নকশি পিঠা দুই মাস পরপর দুবাই পাঠান। এছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বিভিন্ন ধরণের পিঠা স্ন্যাকস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

জানভি জানান, পড়ালেখা শেষ করে অনেক মেয়েরাই চাকরির পিছনে দৌড়ে হতাশায় ভোগেন। তারা যদি আমার মত অল্প পুঁজি নিয়ে ঘরে বসে যেকোন ধরনের ব্যবসার সাথে সংযুক্ত হন, একসময় তারা সফল হবেন। আর পাশাপাশি নিজের একটা পরিচয় তৈরি করার সুযোগ থাকে। সব মিলিয়ে আমি এখন হতাশামুক্ত। আমার সফলতার পেছনে আমার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য।

জানভি আরো বলেন, আমার অনুপ্রেরণার শ্রেষ্ঠ উৎস হচ্ছে আমার স্বামী তাউকির। তিনি আমাকে বাইরে কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন বলে আমি এই কাজগুলো করতে পারছি।

জানভি’র স্বামী তাউকির জানান, জানভি খুব পরিশ্রমী। হাসিমুখে সে পরিবার সামলে নিজের মায়ের সাথে সহযোগী হিসেবে উদ্যোক্তার কাজ করে যাচ্ছে। এতে সে নিজে সুখী হতে পারছে। পরিবারের কাজে তার ব্যবসা কোন সময় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।

এক ছেলের জননী জানভি এবার ব্যক্তি উদ্যোগে (কুইন্স জানভি ফেসবুক পেইজ) একটি উদ্যোক্তা মেলা (ঈদ ফেস্টিভ্যাল-২০২৪ আয়োজন করতে যাচ্ছেন। মেলাটি আগামী ২৭-২৯ মার্চ নগরের জেল রোডস্থ গ্র্যান্ড ভিউ এর হলরুমে অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় প্রায় ৩০ জন উদ্যোক্তা নিজেদের স্টল নিয়ে আসবেন।

গেল ১৫ মার্চ সিলেটে জাতীয় মহিলা সংস্থা আয়োজিত নারী উদ্যোক্তা মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেন, ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের অংশগ্রহণ ব্যতিত উন্নত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যে স্বপ্ন-লক্ষ্য সেটাকে বাস্তবায়ন করতে সকল ক্ষেত্রে নারীদের সমানতালে অংশগ্রহণ জরুরী। এজন্য দরকার নারীদের ক্ষমতায়ন। নারী ক্ষমতায়নের জন্য যা যা করা দরকার সবই করবে সরকার।’

জানভি’র মত নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের পছন্দসই পেশায় যুক্ত হলে দেশ হবে স্বনির্ভর।