সিলেটের ওসমানীনগরে ট্রাকভর্তি বুঙ্গার চিনি ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা। একই সঙ্গে চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সাদিপুর সেতু এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
আটককৃতড়া হলেন সিলেট মহানগর বিএনপির ২৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ সুরমা উপঝেলার বারখোলার ৪৫ রূপালি আবাসিক এলাকার মৃত ছানা মিয়ার ছেলে মো. সোলেমান হোসেন সুমন (৪২), ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভার্তখোলার সোনালী ২২ আবাসিক এলাকার মৃত দিলু মিয়ার ছেলে মো. আবদুল মান্নান (৪৩), সিলেট সদর উপজেলার বটেশ্বরের মলাইটিলার মৃত করম আলীর ছেলে মনির আহমদ (৩২), জৈন্তাপুরের বাঘেরখালের মমতাজ আলীর ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৬), একই এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. শাহীন আহমদ (২৫) এবং গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর তৃতীয়খণ্ডের মঈন উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪২)।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আরাফাত জাহান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সাদিপুর সেতুর সামনে থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভারতীয় চিনিভর্তি একটি ট্রাক, দু’টি মাইক্রোবাস ও দু’টি মোটর সাইকেলজব্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত চারজন এবং চিনির চালান ছিনতাইয়ের চেষ্ঠার দায়ে দুইজন আটক করা হয়। আটক হওয়া ছয়জনের মধ্যে বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের চেষ্ঠা এবং অপর চারজনের বিরুদ্ধে চোরাচালান দমন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
আটককৃতদের তথ্য অনুযায়ী, জৈন্তাপুর থেকে জব্দ হওয়া ট্রাকে করে বুঙ্গার ২০৫ বস্তা চিনি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাদের পেছনে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে (বক্সি) করে ট্রাকটি অনুসরণ করছিলেন চারজন চোরাকারবারি। পথিমধ্যে চিনির চালান লুটের চেষ্ঠা করে একদল ছিনতাইকারী। তারা একটি মাইক্রোবাস (নোহা) ও দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে চিনিভর্তি ট্রাকটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাদিপুর সেতুর সামনে থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় পুলিশ চিনিভর্তি ট্রাক, দুইটি মাইক্রোবাস ও দুইটি মোটরসাইকেল আটক করে। এসময় ৬জনকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হলেও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিলেট সীমান্ত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় চোরাই চিনির ট্রাকটি সিলেট থেকে পিছু ধাওয়া করেন আটক বিএনপির দুই নেতাসহ অজ্ঞাত কয়েকজন। তারা শেরপুর এলাকায় পৌছার পর ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। জনতা বুঝতে পেরে তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দেন। তখন আটক দু’জন নিজেদের বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তারা বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতা সিদ্দিকী বলয়ের নেতা বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা চিনির ট্রাকটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সিলেট থেকে ধাওয়া করেন। পথিমধ্যে শেরপুর সেতু সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে ট্রাকটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে শুরু হয় হট্টগোল। এমন সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে দুই বিএনপি নেতাকে আটক করতে সক্ষম হলেও অন্যরা গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। তখন জনতা পুলিশকে খবর দিলে তাদের আটক করে জব্দকৃত গাড়িসহ থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।