একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ এবং এর ওপর আলোচনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ সময়। সরকারি দলের সংসদ-সদস্যরা প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায়।
প্রতিদিন গড়ে ১৪ মিনিট ৮ সেকেন্ড সময় নষ্ট হয়েছে কোরাম সংকটের কারণে। সর্বশেষ অধিবেশন পর্যন্ত এ কারণে মোট ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে, যা মোট সংসদীয় কার্যক্রমের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
রবিবার (১ অক্টোবর) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্টওয়াচ : একাদশ জাতীয় সংসদ-১ম হতে ২২তম অধিবেশন (জানুয়ারি ২০১৯-এপ্রিল ২০২৩)’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, সংসদ সদস্যরা ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। আর প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় করেছেন অন্য দলের সমালোচনায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সময়।
এই সময়কালে সংসদের কার্যক্রমের মোট ৭৪৪ ঘণ্টা ১৩ মিনিট সময় ব্যয় হয়। গত তিনটি সংসদের তুলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলতি একাদশ সংসদে উন্নতি থাকলেও এটি প্রত্যাশিত মাত্রায় কার্যকর নয় বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনটি উত্থাপনের সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সংসদীয় কার্যক্রমে একতরফা ক্ষমতা চর্চার প্রাধান্য একটি কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক।
তিনি আরও বলেন, সংসদ প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পেরেছে, এমন বলার সুযোগ নেই। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাবের কারণে মূলত সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এ জন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। কারণ, এখন বাস্তব বিরোধী দলবিহীন সংসদ। বিরোধী দল পরিচয়ধারী যে দলটি এখন আছে, তারা আগের তুলনায় কিছুটা সক্রিয় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে।
টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ পরিচালনায় প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় হয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। আর কোরাম সংকটের কারণে ব্যয় করা মোট সময়ের আনুমানিক আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ৮৯ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ সময় ব্যয় করেছে বলে দাবি করেন তারা।
টিআইবির মতে, জাতীয় সংসদে বিল পাশ করতে গড়ে প্রায় ৭০ মিনিট সময় লেগেছিল, যেখানে ন্যূনতম সময় ছিল প্রায় ২৮ মিনিট এবং সর্বোচ্চ সময় ছিল প্রায় ৩ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। ভোটার তালিকা (সংশোধন) বিল-২০২০ সর্বনিম্ন সময়ে পাশ হয়েছে এবং যে বিলটি পাশে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছিল তা হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২।
দীর্ঘ এই সময়ে ১২টি বাজেটসংক্রান্ত বিল ছাড়াও মোট উত্থাপিত বিলের সংখ্যা ছিল ১০৮টি এবং এর মধ্যে ৬৮টি নতুন বিল, ২৬টি সংশোধনী বিল এবং ২টি বাতিল বিল জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে।
টিআইবি’র সর্বশেষ পার্লামেন্ট ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ সময় ব্যয় করেছে এবং ২০১৮-২০১৯ সালে ভারতের সপ্তদশ লোকসভায় এটি ছিল ৪৫ শতাংশ।