একটি ফোনকলের সূত্র ধরেই সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি- ঘটনার ঘন্টা-দেড়েকের মাথায় ঘাতকদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদেরকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তারও করা হবে।
রোববার রাত সাড়ে ১২টায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাজার আলী শেখ জানান, তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে। এই ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব নিয়ে গেল ১৯ তারিখও একটি মামলাও হয়েছে। যেখানে আসামি ছিলেন বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল। আজকেও তারা আ.ফ.ম কামালকে ফলো করছিল। ঘটনার ক্লু উদ্ধার করা হয়েছে। যেকোনো সময় তারা গ্রেপ্তার হতে পারে।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের প্রায় আধাঘন্টা আগে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি ফোনকল আসে। এতে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় যে, পূর্বের ওই মামলার আসামি আ.ফ.ম কামাল বিমানবন্দর সড়ক ধরে শহরের দিকে আসছেন। তারা আ.ফ.ম কামালকে ফলো করছে বলেও জানায় এবং গ্রেপ্তারের তাগিদ দেয়। এর কিছু সময় পরেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এর সূত্র ধরে কারা তাকে ফলো করছিল তাদের পুলিশ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে।
এর আগে গত ১৯ অক্টোবর ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন আজিজুর রহমান সম্রাট নামের একজন। এই মামলায় আ.ফ.ম কামাল ৪নং আসামি। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে এর আগে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া বাদি-বিবাদি প্রায় সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অনুসারী। এই ঘটনার জের ধরেই আ.ফ.ম কামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন : সিলেটে বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল ছুরিকাঘাতে নিহত
এদিকে আ.ফ.ম কামাল হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রোববার রাতে সিলেট নগরীতে ব্যপক তাণ্ডব চালায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা লাঠিসোটা নিয়ে চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়াম পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনের ব্যনার-ফেস্টুনের ওপর হামলে পড়ে। এমনকি তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত তোরণ ও ফেস্টুন ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এসে রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের সামনে এসে জড়ো হন। এসময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এর আগে রোববার রাত রোববার রাত ৯টার দিকে নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল।
আ.ফ.ম কামাল সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক। এছাড়া তিনি সিলেট ল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ছিলেন। তার বাসা নগরীর সুবিদবাজার এলাকায়।
তখন ঘটনাস্থল থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, রোববার রাতে বড়বাজার এলাকায় আ ফ ম কামাল নিজের প্রাইভেটকারে বসা ছিলেন। এসময় মোটর সাইকেলে আসা দুজন দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
নিহতদের মরদেহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিভাবে কারা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। একইসাথে জড়িতদের সনাক্তের পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এদিকে, হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় মিছিল করে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ দাবি করলেও ব্যবসায়ীক কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বলে তখন থেকেই বলে আসছিল পুলিশ।