হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ

অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ, আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে বাঁধা, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি বেতন-ভাতা আদায়, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা।

গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউএনও বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ (৩ সেপ্টেম্বর) আবারও পথে নামছেন তারা।

অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত বাবুল আখতারের স্ত্রী। তিনি নিজে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য।

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, দলীয় ও পারিবারিক প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তিনি স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তারা অভিযোগ করেন, প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলায় নারী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে জাতীয়করণে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও অধ্যক্ষ নেহারুন তার পদ হারানোর শঙ্কায় তা বাস্তবায়ন করতে বাঁধা দিয়েছেন। এর ফলে কেবলমাত্র বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারিরা নয়, নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরাও।

এছাড়াও তিনি পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কম ভর্তি ফি ও বেতন আদায় করতেন আবার অন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি থেকেও বেশি আদায় করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সার্টিফিকেট নেয়ার সময় টাকা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ নেহারুনের বিরুদ্ধে। ভর্তি ফি ও বেতন আদায় সংক্রান্ত বৈষম্যের বিভিন্ন স্লিপ এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।

অধ্যক্ষ নেহারুন এমপিভুক্তি নীতিমালা লঙ্ঘণ করে তার মেয়ে আয়শা আখতার ঊর্মিকে ২০২১ সালে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। তবে যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত তার মেয়ে প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন না করে মাসিক বেতন এবং অতিরিক্ত সম্মানী নিচ্ছেন।

এছাড়াও কলেজ শাখায় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তিনি তার বোনের মেয়ে রাবেয়া বেগমকে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অনেকের দাবি রাবেয়া বেগমের শিক্ষাগত যোগ্যতা কলেজে শিক্ষকতার জন্য যথাযথ নয়।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন যে অধ্যক্ষ নেহারুন নেছার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ জানালে তিনি তার নিজ গ্রাম জানাইয়া থেকে সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মারধরের হুমকি প্রদান করতেন।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হতে দেখে তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সহযোগিতায় নিজের পদ টিকিয়ে রাখতে তৎপর হয়েছেন।

এছাড়াও আন্দোলন ও জোরপূর্বক পদচ্যুতি এড়াতে শারিরীক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ১৮ তারিখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ছুটির আবেদন করেন অধ্যক্ষ নেহারুন নেছা। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউএনও তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও আবেদনপত্রে ইউএনও কার্যালয়ের সিল লাগিয়ে এই জাল ছুটির অনুমোদন দেখিয়ে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে যান তিনি।

সার্বিক ব্যাপারে কথা বলতে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তারের ফোনে সাথে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নান্টু মোহন চন্দের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন ইউএনও অফিসে আসলে অভিযোগপত্র তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা বলছেন, এগুলো যেকোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য লজ্জার। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি সরকারি না, সেকারণে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের হাতে থাকে না। এ বিষয়গুলো স্কুলের পরিচালনা কমিটির এখতিয়ারভুক্ত।’

অভিযোগ ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলতে অধ্যক্ষ নেহারুন নেছার মোবাইলে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। পরবর্তীতে তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোন সাঁড়া পাওয়া যায় নি।