‘আগুনসন্ত্রাসে’ বন্ধ সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস খুলবে কবে?

সিলেট সরকারী কলেজ। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসলেও এখানে আগুনের হুলকি উড়ে ২০১০ সালে। সেদিন দিন-দুপুরে দুর্বৃত্তরা আগুনে পুড়িয়ে দেয় কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটি। এর পর থেকে ছাত্রাবাসটি বন্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে এর সংস্কার কাজ শেষ হয় গেলো ২০১৬ সালে। কিন্তু ছাত্রাবাসটি এখনো বন্ধই রয়ে গেছে। এতে আবাসন নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

২০১০ সালে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছাত্রলীগ-ছাত্র শিবির সংঘর্ষ হলে দিন-দুপুরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় ছাত্রাবাসটি। সেসময় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসটিকে বন্ধ ঘোষণা করে। তবে এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন মামলা না করে একটি সাধারণ ডায়রি করেই দায় সারে। আর ১২ বছর পর এ ঘটনার কোন তথ্যই জানাতে পারেনি পুলিশ। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে এ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি করা হলেও সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।

তবে তৎকালীন ছাত্রলীগের দাবি, নিজেদের কুকর্ম ঢাকতেই শিবির কর্মীরা আগুনে পুড়ায় ছাত্রাবাসটি।

তৎকালীন সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক দেবাংশু দাস মিঠু বলেন, সে সময় ছাত্রাবাসের অধিকাংশ কক্ষই ছাত্র শিবিরের দখলে ছিলো। এমন সময় একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকালে শিবিরের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। একটা পর্যায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ এক হয় তাদের ধাওয়া করলে তারা গিয়ে ছাত্রাবসে আশ্রয় নেয়। পরে তারা পরাস্ত হয়ে তাদের দীর্ঘদিনের কুকর্ম ঢাকতে সকল ছাত্রাবাসে আগুন লাগিয়ে দেয়।

অপরদিকে কলেজ সূত্রে জানা যায়, আর আগুন সন্ত্রাসে বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাত্রাবাসটি প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শেষ হয় গেল ২০১৬ সালে।

সরেজমিনে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ফার্নিচারসহ সক আসবাবপত্রসহ সকল কিছু প্রস্তুত থাকলেও অব্যবহৃত থাকায় দেয়ালে শেওলা জমেছে, নষ্ট হতে চলেছে দরজা-জানালা, ঘিরে ধরছে ঝোপ-ঝাড়। আর আবাসন না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের নয়ন আহমদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের হোস্টেল থাকতেও আমাদের কষ্ট করে বাইরে থাকতে হচ্ছে। ছাত্রাবাসটি চালু হলে আমাদের আবাসনের সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। তাই দ্রুত এই ছাত্রাবাসটি চালু করার দাবি জানান তিনি।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনায় দ্রুত ছাত্রাবাসটি চালু করা হবে।

সিলেট সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। আমি জেনেছি প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রাবাসের সংস্কার হয়েছে। আমি আসার পর এটি চালু করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসেই এটি চালু করা হবে।’

দীর্ঘদিন এটি বন্ধ থাকা এবং এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ না দেখা প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে সময় যারা ছিলেন তারাই এটি ভালো বলতে পারবেন। তবে যে কোন ঘটনায় সঠিক তদন্ত করে এর বিচার হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।’