বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসিদের সবসময় আহ্বান জানানো হয় দেশে বিনিয়োগ করার জন্য। সরকার প্রধান ও মন্ত্রীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রবাসিরা দেশে বিনিয়োগ করেছেন শত শত কোটি টাকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি মামলা ও গ্রেপ্তার করে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
একারণে দেশে বিনিযোগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি চরম ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন প্রবাসিরা।
গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ‘হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র সাত পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয় গত ২১সেপ্টেম্বর। রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের ‘হোমল্যান্ড লাইফ’র প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সকলেই ব্রিটিশ নাগরিক এবং দেশটির প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভাইস-চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক যথাক্রমে আব্দুর রব, কামাল মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল আহাদ, জামাল উদ্দিন মখদ্দুস ও আব্দুল হাই। এই ব্যবসায়িরা হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী ছাড়াও দেশে নানা ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সাত পরিচালক প্রবাসে থেকে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে গড়ে তোলেন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন চেয়ারম্যান ও সিইও। তারাই সবকিছু দেখভাল করেন। বিভিন্ন সময়ে প্রবাসি পরিচালকরা কোম্পানীর অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে সোচ্ছার ছিলেন। এ কারণে চেয়ারম্যান ও সিইও তাদের উপর ক্ষুব্দ ছিলেন।
পরিচালকদের স্বজনরা বলছেন, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ হলে মামলার হওয়ার কথা চেয়ারম্যান, সিইও বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে। কিন্তু কথিত গ্রাহকের মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রবাসে থাকা সাত উদ্যোক্তা পরিচালকের বিরুদ্ধে। অন্য পরিচালকদেরও মামলার আসামি করা হয়নি। প্রবাসিদের বিনিয়োগকৃত টাকা আত্মসাৎ ও পরিচালক পদ থেকে বাদ দেয়ার কৌশল হিসেবে চেয়ারম্যান এবং এমডি মামলা ও গ্রেপ্তার করিয়ে তাদের করে হয়রানি করছেন।
এদিকে গতকাল বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মাহবুবুল হক শেরিন নামের স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানকে। প্রবাসিদের বিনিয়োগের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাহবুবুল হক শেরিন সিলেট মহানগরে ‘আম্বরখানা আবাসন এসোসিয়েট প্রাইভেট লি. কোম্পানি’র উদ্যেক্তা করার প্রলোভন দেখিয়ে বহু প্রবাসির কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছেন প্রতারিতরা। এছাড়া গ্রেপ্তারের পর আরও ২২জন তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। যাদের অধিকাংশই প্রবাসি। মাহবুবুল হক শেরিন জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক আ স ম মাসুম বলেন, প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের যদি নানাভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হয়রানি, তাদের অর্থ আত্মসাৎ করা হয় তাহলে কেউ যাবে না বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে।
যুক্তরাজ্যস্থ সুনামগঞ্জ প্রবাসি সমিতির সভাপতি ইমানুজ্জামান মহি বলেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রবাসিদেরকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়, প্রবাসিরা শ্রম ঘামে উপার্জিত টাকা দেশে বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগের পর যদি তাঁরা হয়রানিতে পড়েন, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ আর বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি থাকা উচিত।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে কমিউনিটিতে কোন দিন কোন অভিযোগ উচ্চারিত হয় নি, দুঃখজনকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে জেলে রাখা হয়েছে। এটা গভীর ষড়যন্ত্র, কারণ হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম আছে, এটার জন্য চেয়ারম্যান, এমডি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে শুধু মাত্র লন্ডন প্রবাসি সাত পরিচালককে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আমাদের দাবি, প্রবাসিদের যেন বিনিয়োগের সুরক্ষা দেয়া হয়।’