হরতাল-অবরোধের ৭২ দিনে ৫০৫ বাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর

রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে হরতাল-অবরোধের ৭২ দিনে ৫০৫ বাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। আর এই অগ্নিসংযোগে নিহত হয়েছেন ১২ জন, আহত হয়েছেন ৬৪৩ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৮৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সহিংসতামুক্ত পথ-এর দাবিতে শান্তি সমাবেশ ও প্রতিবেদন পাঠ-এ এ তথ্য জানান সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা।

বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন বাহনে অগ্নি সংযোগের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার-দৃষ্টান্তমূলক বিচারের প্রত্যয়ে হরতাল-অবরোধকালীন সময়ে অগ্নিসংযোগ-অর্থনৈতিক ক্ষতি ও হতাহতর প্রতিবেদনে সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা আরো তুলে ধরে বলেন- গত ২৮ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সহিংসতার রাজনীতি দানা বেঁধে উঠেছে। সেভ দ্য রোড-এর গবেষণা সেল-এর তত্বাবধায়নে ২২টি জাতীয় দৈনিক, ১১টি ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম, ২৪টি নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং প্রত্যক্ষদর্শী- স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যানুযায়ী গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭২ দিনে দুর্বৃত্তদের রাজনীতির নামে মানুষকে কষ্টে বেদনায় আক্রান্ত করার সহিংসতায় ৫০৫ টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮৭টি বাসসহ বিভিন্ন পরিবহণ এবং ১৮ ট্রেনের বগি। ২৮ অক্টোবরই প্রথম রেলওয়ের বগিতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

এখানেই শেষ নয়, মা ও সন্তান একসাথে মোহনগঞ্জ এক্সেপ্রেসে নির্মম আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে এই দুর্বৃত্তদের আগুনে। এই অগ্নিসংযোগকারীদের আগুন থেকে রেহাই না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আত্মাহুতি দিয়েছেন একজন পিতা। একই সাথে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে। চন্দ্রিকা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থীকে এখনো খুঁজে পায়নি তাঁর পরিবার। কিন্তু এত এত নির্মম ঘটনার একটিও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি এখনো। হয়নি দুর্বৃত্তদের বিচারও।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন আকাশ-সড়ক- রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার লক্ষ্যে সচেতনতা-স্বেচ্ছাসেবি ও গবেষণা সংগঠন সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম।

বক্তব্য রাখেন, প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী, বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিক, বগুড়া জেলা সেভ দ্য রোড-এর আহবায়ক ওয়াজেদ রানা, রিয়াদ ইসলাম প্রমুখ।

লিখিত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়- যদি সুষ্ঠু তদন্ত- গ্রেফতার ও বিচার হতো, তাহলে এই দুর্বৃত্তরা আর একের পর এক সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারতো না। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ৪টি সুপারিশ উপস্থাপন করে সেভ দ্য রোড।

সুপারিশগুলো হলো :

১. দল-মত নির্বিশেষে বাহনে অগ্নিসংযোগকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দ্রুত করার লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিন
২. সেভ দ্য রোড-এর গত ১৬ বছর ধরে চেয়ে আসা দাবি- প্রতি ৩ কিলোমিটার অন্তর পুলিশ বুথ স্থাপন করুন
৩. অনতিবিলম্বে হাইওয়ে, নৌ, রেল ও ট্রাফিক পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত ও সক্রিয় করে গড়ে তুলুন
৪. সারাদেশে সকল ল্যাম্পপোস্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করুন।