তখন সিলেট স্ট্রাইকার্স ও ফরচুন বরিশালের খেলা চলছে। প্রথম ইনিংসে সিলেট ব্যাটিং করার সময়ের মাঝপথে হঠাৎ সবার চোখ গেল শেরে-ই-বাংলার ইস্ট জোনের গ্যালারিতে। সেখানে দেখা গেল, সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সি পরিহিত একদল শিশু সারিবদ্ধ হয়ে লাইন দিয়ে গ্যালারিতে উঠছে।
এমনিতেই অন্যদিনের চেয়ে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) মিরপুরের গ্যালারিতে দর্শকের সংখ্যা ছিল কয়েকগুন বেশি। তবে তার মধ্যেও এই ছোট ছোট শিশুদের এভাবে গ্যালারিতে আসা যেন চোখে আটকালো।
মিরপুরের প্রেসবক্স থেকে দেখে আয়েশ না মেটায় সরাসরি গ্যালারিতে যেতে হলো। সেখানে দেখে প্রথম দেখায় প্রত্যেক শিশুকে যে পরিমাণ উচ্ছ্বসিত দেখালো তাতে যে কারো মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা।
শিশুদের কারও হাতের প্লাক্যার্ডে লেখা, ‘লাভ ইউ মাশরাফি’ তো কেউ লিখে এনেছেন তৌহিদ হৃদয় বা সিলেট স্ট্রাইকার্সের জন্য ভালোবাসার বার্তা। এদের সবাই ‘ছায়াতল বাংলাদেশ’ সংগঠনের ব্যানারে আজ খেলা দেখতে এসেছিল।
এই শিশুদের কারও বাবা নেই, কারও মা নেই আবার কারও বাবা রিকশা চালায় বা মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ফলে তাদের জন্য মাঠে এসে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা স্বপ্ন পূরণের মতোই।
হাসান শেখ নামের এক শিশু বলে, খেলা হলে রাস্তার ধারে দোকানে দাঁড়িয়ে টিভিতে দেখতাম। কোনোদিন ভাবিনি মাঠে এসে খেলা দেখতে পারবো। আজকে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
হাসানের পাশে বসা সজীব ইসলাম নামের আরেক শিশু তো বিশ্বাসই করতে পারছিল না মাঠে এসেছে। সে বলে, মাশরাফিকে আমার ভালো লাগে। তার খেলা সামনে থেকে দেখতে পেরে খুশি লাগছে।
একটু উপরের দিকে বসেছিল সাইমা নামের আরেক শিশু। মেয়েরটি বয়স দশও পার হয়নি। মাঠে আসার পর কিছুক্ষণ কেটে গেলেও বুঝে উঠতে পারছিল না আসলে কি করবে সে।
মূলত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়াতল বাংলাদেশের ব্যানারে এসেছিল শিশুরা। শিশুদের সাথে এসেছিলেন বেশ কয়কেজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে একজন ছায়াতলের প্রচার সম্পাদক কাকলী কাদের নিপা। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, সজীব, হাসানদের মতো অন্তত ২০০ পথশিশুকে মাঠে বসে খেলা দেখার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার সিলেট স্ট্রাইকার্সের কল্যাণে।
শুধু তাই নয়, সিলেট-বরিশাল ম্যাচে সবচেয়ে উৎসাহী ফ্যান নির্বাচিত হয়েছে ছায়াতলেরই এক মেয়ে। ম্যাচ শেষে ম্যাচ সেরা নাজমুল হোসেন শান্ত তো বটেই, সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গেও ছবি তোলা ও কথা বলার সুযোগ পেয়েছে সে।
নিপার সাথে কথা বলে জানা গেল, ছায়াতল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকেন তারা। তাদের চারটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসও রয়েছে।
নিপা বলেন, একটি বাচ্চার বেড়ে ওঠার জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন আমরা সবই দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের আসলে কোনো স্থায়ী আবাসস্থল নেই। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওরা আমাদের কাছেই থাকে। থাকার সুবিধা বাদে আমরা সবই দিচ্ছি বাচ্চাদের।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ছায়াতল বাংলাদেশকে সম্প্রতি সরকার এনজিও সংগঠনের নিবন্ধন দিয়েছে বলে জানান কাকলি। মাঠে আসার পিছনের গল্প জানতে চাইলে কাকলি বলেন, সিলেট স্ট্রাইকার্সের পক্ষ থেকেই সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতাতেই শিশুরা মাঠে আসতে পেরেছে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের পরিচালক সাইফুল রাজা চৌধুরী পথিক ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের সংগঠনের কথা শুনে তার মনে হয়েছে, ২০০ শিশুদের শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানবিকাশ, মনোরঞ্জনেরও প্রয়োজন রয়েছে। এই বাচ্চারা হয়তো নিয়মিত খেলা দেখার সুযোগও পায় না। মাশরাফির খেলা, সিলেটের খেলা দেখলে তাদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। এই উদ্দেশ্যেই সিলেট স্ট্রাইকার্স সম্পূর্ণ খরচ বহন করে বাচ্চাদের এখানে নিয়ে এসেছে।
শিশুদের স্বপ্ন পূরণের দিনে অবশ্য হতাশ করেনি সিলেট। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে দুই রানের ব্যবধানে হারিয়ে চলতি বিপিএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে মাশরাফির দল।
সূত্র : সংবাদ প্রকাশ