দেশের শস্য ভাণ্ডার সুনামগঞ্জে ধুম পড়েছে ধান বোরো ধান কাটার। এবার হাওরে এবার ঢলের স্রোতে বাঁধ ভাঙেনি, বাঁধ ভেঙেছে ভরা ক্ষেতের মধুর হাসি।
জেলার ১৩৭টি হাওরের ২ লক্ষ ২৩ হাজার ২শ ৪৫ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বন্যা, খরা, পোকা এবং রোগের উপদ্রব না থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার।
২০১৭ সালের বন্যায় জেলার সব হাওর তলিয়ে নষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ বোরো আবাদ। দেশে দেখা দেয় চাল সংকট। আলোচনায় আসে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম আর দুর্নীতি।
আর এ সংকট মোকাবেলায় পরিবর্তন হয় বাঁধ নির্মাণের কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) নীতিমালা। স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) নির্মাণ করে ফসল রক্ষা বাঁধ।
তবে এবার আর আগাম বন্যার আশঙ্কা না থাকায় অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়নি নির্মিত বাঁধগুলোকে। বরং ভালো ফলনে খুশি গৃহস্থরা।
চলতি বছরে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ৭ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত হাওরের ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে আগামী ৫মের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহারের ফলে ধান দ্রুত কাটা ও মাড়াই হয়ে যাচ্ছে।
ধানক্ষেতে কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীরাও ব্যস্ত ধান শুকানো ও সেদ্ধ করার কাজে। হাওরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে ধান উৎপাদন একটি পারিবারিক কাজ আর এ কাজে ব্যস্ত প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি মানুষ। কষ্টের ধান কোনমতে ঘরে তুলতে পারলেই খুশি সবাই।
দেখার হাওরর পশ্চিম পাড়ের কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ‘ পাঁচ একর জমিতে ধান চাষ করছি। এ বছর বৃষ্টির ঝামেলা না থাকায় নিশ্চিন্তে ধান তুলতে পারছি। একই সাথে বন্যা বা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কোনও আশঙ্কাও ছিলো না।‘
একই হাওরের কৃষক জয়নুল মিয়া বলেন, ‘অনেক বছর পর এবার অনেক ভাল ফলন হয়েছে। আল্লাহ দরবারে আমাদের শুকরিয়া। যে পরিমাণে ধান হয়েছে, খাওয়ার ধান রেখে অন্তত ৫০ মণ ধান বিক্রি করতে পারবো।‘
কৃষাণী জমিলা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী নেই, লোক লাগিয়ে আমার জমিতে ধান চাষ করাই। সন্তানদের নিয়ে ধান মাড়াই শেষে শুকানোর কাজ করছি। এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। আমার ৫ কেদার জমিতে প্রায় ৭৫ মণ ধান পাবো বলে আশা করছি।‘
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল কুমার সোম জানান, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। সময়মত আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধান ও বীজ সরবরাহ করেছি। একই সাথে বাজারেও সার বীজের সরবরাহ ভাল ছিল। যার ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।‘