সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ভাণ্ডার থেকে প্রায় ২৮ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পাম্প অপারেটর হাসান মাহমুদ মাসুম, সুজেল আহমদ ও লিটন আহমদকে। এছাড়া ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আট অস্থায়ী শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়। যদিও ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সিসিকের কর্তারা। এমনকি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে নারাজ।
জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের ভাণ্ডারে প্রায় ১২৮৬ টি ফ্লু মিটার মজুদ ছিল। যা সারদা ভবন সংলগ্ন অস্থায়ী ভাণ্ডারে অন্যান্য মালামালের সাথে রাখা হয়। এরপর বিগত ২১ মার্চ ২০২২ তারিখে কুশিঘাটে নগরীর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে ৫৩৫টি মিটার স্থানান্তর করা হয়। তবে পরবর্তীতে কাজের প্রয়োজনে যখন ৫০টি মিটার উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে, তখন দেখা যায়- ভাণ্ডারে কোনো মিটারই অবশিষ্ট নেই। এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানায় একটি জিডি করেন সিসিক পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান। জিডিতে ৫৩৫টি মিটারের মূল্য ২৭ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫০ টাকা উল্লেখ করা হয়।
জিডিতে সন্দেহভাজন কারো নাম উল্লেখ না থাকলেও ঘটনা জানার পরপরই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পাম্প অপারেটর হাসান মাহমুদ মাসুম, সুজেল আহমদ ও লিটন আহমদকে। এছাড়া এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয় আট অস্থায়ী শ্রমিককে। চাকরিচ্যুত হওয়া ৮ জন হলেন- জহুরুল ইসলাম মোহন, শফিকুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন, আব্দুল হক ইমন, আব্দুল্লা আল সোহাগ, প্রশান্ত দাশ শান্ত, জনি চক্রবর্তী, আব্দুল মুতলিব ও আব্দুল মিয়া।
তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সাময়িক বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুতির কথা বলা হলেও এখনো সবাই যার যার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানায় সিসিকের একাধিক সূত্র। যদিও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে নারাজ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের একটি ভাণ্ডার হতে আরেকটি ভাণ্ডারে স্থানান্তর করার পর ৫৩৫টি মিটারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য থানায় জিডি করা হয়েছে ও কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে, রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রশাসনিক শাখায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও সিসিকের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান জানান, ঘটনা জানার পর পরই সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল শাখার তিন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তারা হলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর, পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান ও সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক তপাদার। এছাড়া এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ স্থায়ী কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত ও অস্থায়ী ৮ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে উল্লেখিত কর্মচারীরা এখনো যার যার জায়গায় কর্মরত রয়েছেন। যদিও এমন ঘটনা জানা নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও সিসিকের সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক তাপাদার বলেন, জহুরুল ইসলাম মোহন, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল হক ইমন, আব্দুল্লাহ আল সোহাগ, প্রশান্ত দাশ শান্ত, জনি চক্রবর্তী এরা এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে দায়িত্ব পালন করতেন। সুতরাং এই ঘটনার দায় তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারেনা। তাদের অনেককে অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি ৩ জনের সাময়িক বরখাস্তের খবরও নিশ্চিত করেন এই প্রকৌশলী। তবে চাকরিচ্যুতরা এখনো কর্মস্থলেই আছেন কিনা তা জানা নেই তার।
এদিকে, ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন ও চাকরিচ্যুত কর্মচারী জহুরুল ইসলাম মোহনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এখনো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে কর্মরত আছি। চাকরি যাবার ব্যাপারে এখনো আমাকে নগর ভবন হতে কিছু জানানো হয় নি। সিসিক থেকে জানানোর ব্যাপারে বলা হলে তিনি বলেন, এটা সিসিক কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। আমি এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।
তবে জানা যায়, এই চুরির ঘটনায় নড়েচড়ে বসলেও সিসিকের মূলত কেন্দ্রীয় কোনো ভান্ডারই নেই। সিসিকের মূল ভবন নির্মাণের সময় অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত সারদা ভবন সংশ্লিষ্ট পরিত্যক্ত তোপখানা পানি শোধনাগার এবং নগরীর কুশিঘাটস্থ কুইটুক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টকে ভান্ডার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেখানে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী বা সিসিটিভির ব্যবস্থা নেই। এতে প্রায়ই ঘটে মালামাল খোয়া যাবার মত ঘটনা। তবে এবারের মত বড় আকারে হয় নি বলে, কর্মকর্তারা ছিলেন উদাসীন। একসাথে প্রায় ২৮ লাখ টাকার মালামাল খোয়া যাবার পরপরই গত ২৯ তারিখ থেকে এই দুই জায়গাতেই নিয়োগ করা হয়েছে আনসার সদস্যদের।
এসব ব্যাপারে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করতে নারাজ। ভাণ্ডারের নিরাপত্তায় কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে থেকে কেন রাখা হয় নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এমনিতেই সুরক্ষিত জায়গা, এখানে আলাদা করে নিরাপত্তার দরকার হয় না। এছাড়া শহরের বাইরে বলে লাগানো হয় নি সিসি ক্যামেরা।
নিজস্ব কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক অনেক মালামাল তো তাই এক ভাণ্ডারে এসব জায়গা করাও কঠিন। তাই সিসিকের বিভিন্ন জায়গায় ভাগ করে রাখা হয়েছে।
সূত্র : ভোরের কাগজ