সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পতিত জমি প্রবাসীদের। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবমুক্ত রাখতে যখন কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রতি জোর দিচ্ছে সরকার, তখন সিলেটের এই বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এর অংশ হিসেবে চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগে ৪৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর পতিত জমি নতুন চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হয়। শুধু তাই নয়, কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে উদ্ভুদ্ধ করতে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা। তবে, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে হলে সেচের অভাব দূর করার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘দেশের কোন পতিত জমি অনাবাদী থাকবে না’ – বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবমুক্ত রাখতে এমন ঘোষণা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। এরপর থেকে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রতি জোর দেয় দেশের প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চলের তথ্যমতে প্রবাসি অধ্যুসিত ও হাওরবেষ্টিত সিলেট অঞ্চলে অনাবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর। চলতি মৌসুমে ৪৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা হয়। তবে বেশীরভাগ পতিত জমির মালিকেরা প্রবাসে। তাছাড়া দেশে থাকা মানুষজন প্রবাসনির্ভর হওয়ায় কৃষকদের সাথে রয়েছে তাদের দূরত্ব।
এমন বাস্তবতায় প্রবাসীদের অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি বুরো ও আমন ধান চাষেও উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা কৃষক সমাবেশের মাধ্যমে ধান চাষসহ অন্যান্য ফসলের জন্য প্রান্তিক কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ধান চাষের পর স্বল্পমেয়াদী ফসল সরিষা চাষেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে কৃষকদের। পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় শুধু সিলেট জেলায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছিল। যেখানে ধান থেকে পাওয়া চালের মূল্য প্রায় ৫১ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, বুরো কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে যাতে তারা সব জমি সেচের আওতায় এনে চাষাবাদ করতে পারে।
সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পতিত জমি প্রবাসিদের; উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করে কৃষকদের সাথে তাদের বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে। যেকারণে অনেক প্রবাসি চাষাবাদের জন্য কৃষকদের জমি দিতে চান না। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রবাসিদের সাথে যোগাযোগ করে অনাবাদি জমিগুলো তাদের বিশ্বস্ত লোকদের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট জানায়, কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে উদ্ভুদ্ধ করতে এবছর প্রণোদনা দেয়া হয় সিলেট বিভাগের ৩ লক্ষ ১১ হাজার ৪২০ জন কৃষককে। এতে করে সফলতাও আসছে। সরকারের চেষ্টায় লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। তবে সেচের অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, সরকার কৃষকদের বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করছে। এমনকি পুনর্বাসনও করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সেচযন্ত্রও দেয়া হচ্ছে। তবে সেচের পানির অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
হাওরের মূল অংশে বুরো ছাড়া অন্য কিছু চাষাবাদের সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওরের কিনার অংশে শাকসবজি বা অন্যান্য স্বল্পমেয়াদী ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বিষয়টি বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে।
এদিকে কৃষিখাতে সরকারি সহায়তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রান্তিক কৃষকরা। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মৌসুমের শুরুতে বীজ বিতরণের তাগাদা কৃষকদের।