নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়টি। অবাক করার বিষয় হলো এই বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি অনিয়ম ও দুর্নীতিতে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী নিজে সরাসরি জড়িত। ফলে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা ও স্কুলের মানোন্নয়ন দিনদিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ২ আগস্ট চারটি পদে ওই স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়। নিয়োগ পরিক্ষার পূর্ব থেকেই নিয়োগ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ছিল নানা গুঞ্জন। পরীক্ষার পরের দিনই নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণাদিসহ অভিযোগ তুলে মানববন্ধন ও স্কুল ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী ও নিয়োগ বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা। অবশেষে নজিরবিহীন দুর্নীতির দায়ে পরিক্ষার ১৮ দিনের মাথায়ই বির্তকিত নিয়োগটি বাতিল করতে বাধ্য হন বিদ্যালয় পরিচালনা ও নিয়োগ কমিটি।
অবৈধ ও বিতর্কিত নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী আর্থিক লেনদেনে সরাসরি জড়িত থাকার বেশকিছু প্রামাণ পাওয়া গেছে।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কমিটির সদস্য ইন্দুভূষণ দাসকে দিয়ে আর্থিক লেনদেন করান সেসবের প্রমাণাদি হিসেবে বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভাইরাল। এসব দুর্নীতির দায়ে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরীকে বিদ্যালয়ের নানাধরণের ক্ষতিপূরণ দেখিয়ে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নিয়োগ বাণিজ্যে সরাসরি যুক্ত ইন্দুভূষণ দাস। তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েও অবৈধভাবে শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়র ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল একটি ল্যাপটপ ৩ বছর প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী তার ব্যক্তিগত কাজে বাসায় ব্যবহার করে ল্যাপটপটি সম্পূর্ণ অকেজো অবস্থায় বিদ্যালয়ে ফেরত দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় যেকোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে যাতে বাধা না দেয় সেজন্য স্কুল ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দেন ওই স্কুলের একজন প্রভাবশালী সহকারী শিক্ষক সুজিত কুমার দাসকে। জানা যায়, স্কুল ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা প্রায় ১০ মাস ধরে সুজিত কুমার দাসের পকেটে রয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন প্রধান শিক্ষক তার দুর্নীতির পথ সুগম করতেই স্কুল ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা সুজিত মাষ্টারকে হাওলাত হিসেবে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনি।
স্থানীয় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন স্কুল প্রধান যখন একটি স্কুলের প্রত্যেকটি দুর্নীতিতে জড়িত থাকে তখন সেই স্কুল আর উন্নতির দিকে এগোতে পাররে না। শুধু তাই নয় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন থেকে নতুন ভবনে বিদ্যুতের একটি লাইন খুবই বিপদজনক অবস্থায় টানানো আছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে নিয়োগ কমিটির সদস্য ইন্দুভূষণ দাসের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে বিদ্যালয়ের দুটি পুকুর প্রধান শিক্ষক লিজ দিয়েছেন ইন্দুভূষণ দাসকে। কিন্তু কাগজে কলমে লিজ দেখানো হলেও গতবছরের লিজের টাকা আদায় না করেই এবছরও প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইন্দুভূষণ দাসকে দুটি পুকুর লিজ দিয়েছেন। ইন্দুভূষণ দাসের কাছে এখনো পাওনা রয়েছে বলে জানান স্কুল পরিচালনা কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য।
তবে বরাবরের মতোই সব অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা এবং সহকারী শিক্ষক সুজিত কুমার দাসকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন আমি টাকাগুলো নিয়ে নেব। একইসাথে এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
তবে সহকারী শিক্ষক সুজিত কুমার দাসের দাবি প্রধান শিক্ষককে বারবার বলার পরেও তিনি স্কুল ফান্ডের টাকা গ্রহণ করছেন না।
এ বিষয়ে শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য প্রাণকৃষ্ণ দাস বলেন, স্কুল ফান্ডের ছাত্রছাত্রীদের বকেয়া, সেশন ফি ও বেতনের কিছু টাকা সুজিত মাষ্টারের কাছে রয়েছে সেটা আমি জানি। তবে এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে কিছু জানান নি।
তিনি আরও বলেন, পুকুরের লিজের টাকাসহ স্কুল ফান্ডের যত টাকা যাদের কাছে রয়েছে সে-সবের দায়িত্ব নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। আগামী শুক্রবারে সেসব টাকা ইউপি চেয়ারম্যান উদ্ধার করে দিবেন বলে কথা দিয়েছেন।
এব্যাপারে শ্যামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পলাশ রঞ্জন দাসের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি স্কুলে মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন।