গত কয়েক বছর রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ভালো ছিল। দামও ছিল নাগালের মধ্যে। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন হতে পারে। এলসি খুলতে না পারায় চাহিদামতো খেজুর আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় রমজানে খেজুরের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং দামও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে সবচেয়ে বেশি খেজুর আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে। করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক বছর সৌদি আরবে ওমরাহ ও হজ পালনে নানা বিধিনিষেধ ছিল। তাই দেশটিতে মানুষের সমাগমও ছিল কম। যার প্রভাব পড়ে খেজুরের বাজারে। খেজুরের চাহিদা কমায় ধস নামে দামেও। যার সুবিধা পায় বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর তুলনামূলক কম দামে খেজুর আমদানি করেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রিজার্ভ মজুত ও ডলার সংকট থেকে উত্তরণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ অন্যতম। এলসি খোলার ক্ষেত্রে লাগাম টানার জেরে কয়েক মাস খেজুর আমদানি করতে পারেননি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের শেষের দিকে খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলার অনুমতি পান ব্যবসায়ীরা। তারপরও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে। এদিকে, যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে খেজুর আসে ওই সব দেশের মুদ্রার দামও টাকার চেয়ে বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে খেজুর আমদানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়েছে দেশের বাজারে। সামনে আরও সংকট দেখা দিতে পারে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সারা বছরই দেশে কম-বেশি খেজুর আমদানি হয়। রমজানকে সামনে রেখে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যায়। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২ মাসে দেশে খেজুর এসেছে ১১ হাজার ৫৭০ টন। যা স্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। গত বছর রমজানের আগের কয়েকমাসে প্রায় ৩০ হাজার টন খেজুর এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ দিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ। আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, রোজায় বাজার স্বাভাবিক রাখতে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টন খেজুর আমদানি করতে হবে। সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমদানি অনেক কম।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক (ডিডি) নাছির উদ্দিন বলেন, ‘খেজুর আসা একেবারে বন্ধ হয়নি, পরিমাণে কম আসছে। এলসি-ডলার সমস্যার কারণে আমদানি কম হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বৈশ্বিক। এজন্য সরকারও গুরুত্ব দিচ্ছে অপ্রয়োজনীয় জিনিস এনে যাতে ডলার খরচ না করা হয়। খেজুর কিন্তু খুব জরুরি জিনিস নয়। আমরা ইফতারে খেজুর দুটিও খেতে পারি আবার পাঁচটিও খেতে পারি। এজন্য আগের চেয়ে কম আসলেই সংকট তৈরি হবে, বিষয়টি এমন নয়।’