যুক্তরাজ্যে আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যাক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি, গ্রিন পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে ও স্বতন্ত্র হিসেবে এসব প্রার্থি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র ব্যানারে নির্বাচন করলেও প্রার্থিদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভোটারদের ওপর ভরসা ও ফিলিস্তিনি ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এবারের নির্বাচনে নারী সহ ৩১জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে লেবার পার্টি থেকে ৮জন, কনজারভোটিভ পার্টি থেকে ২জন, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ৫জন, লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি (লিবডেম) থেকে ১জন, রিফর্ম পার্টি থেকে ১জন, গ্রিন পার্টি থেকে ২জন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) থেকে ১জন অংশ নিচ্ছেন নির্বাটনে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১জন।
চারটি আসনে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশিদেরই লড়তে হচ্ছে। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন ও স্টেপেনি আসনে ৫জন, ইলফোর্ড সাউথ আসনে ৫জন, স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে ৩ জন এবং পপলার এন্ড লাইম হাউস আসনে ২জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
লেবার পার্টির মনোনয়নে বেথনাল গ্রিন এন্ড স্টেপেনি আসনে রোশনারা আলী, হ্যাম্পস্টেট অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, পপলার এন্ড লাইম হাউজ আসনে আপসানা বেগম, ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড একটন আসনে রূপা হক, গর্ডন অ্যান্ড বুচান আসনে নুরুল হক আলী, উইথাম আসনে রুমি চৌধুরী, সাউথ নর্থাম্পটন আসনে রুফিয়া আশরাফ, ব্রিগ ইম্মিংহাম আসনে নাজমুল হোসেন নির্বাচন করছেন।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ২জন মনোনয়ন পেয়েছেন। আতিক রহমান টটেনহাম আসনে ও সৈয়দ শামীম আহসান ইলফোর্ড সাউথ থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়নে ইলফোর্ড সাউথ আসনে গোলাম টিপু, বেডফোর্ড আসনে প্রিন্স ছাদিক চৌধুরী ও হকনি সাউথ সরডিচ আসনে মোহাম্মদ সাহেদ হোসাইন, সেল ওয়েস্ট আসনে ফয়সল কবির, ম্যানচেস্টার রুসলম আসনে মোহাম্মদ বিলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গ্রিন পার্টির মনোনয়ন পেয়ে ইলফোর্ড সাউথ আসনে সৈয়দ সিদ্দিকী ও ওল্ডহাম ওয়েস্ট রস্টন আসনে সৈয়দ সামসুজ্জামান শামস লড়ছেন। ইলফোর্ড সাউথ আসনে আসনে রিফর্ম পার্টির মনোনয়নে নির্বাচন করছেন রাজ ফরহাদ।
লিবারেল ডেমোক্রেট পাটির্র (লিবডেম) মনোনয়নে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপেনি আসনে রাবিনা খান নির্বাচন করছেন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) মনোনয়নে ডানফার্মলাইন আসনে নির্বাচন করছেন নাজ আনিস মিয়া।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপেনি আসনে আজমল মাসরুর, সাম উদ্দিন, সুমন আহমদ, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে এহতেশাম হক, স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, নিজাম আলী ও হালিমা খাতুন, ইলফোর্ড সাউথে নূর জাহান বেগম, হেলবন অ্যান্ড পেনক্রাস আসনে ওয়াইস ইসলাম, ব্যাক্সহিল অ্যান্ড বেটল আসনে আবুল কালাম আজাদ, ওল্ডহাম ওয়েস্টে রাজা মিয়া নির্বাচন করছেন।
বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপেনি আসনের বর্তমান এমপি রোশনারা আলীসহ ১১জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রোশানারা আলীকে আরও ৪ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে ২০১০ সালে রোশানারা আলী লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে নির্বাচিত হন। বর্তমানে টানা চার বারের এমপি তিনি।
পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে বর্তমান এমপি আপসানা বেগমকে তাঁর সাবেক স্বামী স্বতন্ত্র প্রার্থী এহতেশাম হকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। আপসানা বেগম সর্বশেষ নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়ন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বর্তমানে চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা হলেন, রোশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রূপা হক ও আপসানা বেগম। এর মধ্যে রোশনারা আলী টানা চার বার, টিউলিপ ও রূপা হক তিনবার ও আপসানা বেগম একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টি জয়লাভ করলে রোশানারা অথবা টিউলিপ যে কোন এক জন মন্ত্রী সভায় স্থান পেতে পারেন।
নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের আগ্রহের শেষ নেই। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন প্রবাসীরা।
লুটন যুক্তরাজ্যের অন্যতম বাংলাতেশি অধ্যুষিত শহর। সেখানে বসবাস করা মেহেদি হাসান খান বলেন, ‘আমি আগে স্থানীয় ইলেকশনে ভোট দিয়েছি, এবারই প্রথম জাতীয় ইলেকশনে ভোট দেব। যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক মন্দা, ফিলিস্তিনি ইস্যু, ইমিগ্রেশনের নানা পরিবর্তন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের অংশ গ্রহণ সহ নানা কারণে প্রবাসীদের কাছে আগ্রহ তৈরি করেছে আসন্ন নির্বাচন।’
লন্ডনের বাসিন্ধা সরফ রাজ জুবের বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মতবিরোধরে কারণে বেশ কয়েকটি আসনে একা্ধিক বাংলাদেশি প্রার্থী। কমিউনিটির লোকজন বিভক্ত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, এতে আমাদের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে। প্রার্থীদের মধ্যে ছাড় দেয়ার মনোভাব থাকলে দিতে পারলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপির সংখ্যা আরো বাড়তে পারত।’
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘আমি রোশনারা আলীর পক্ষে ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছি, কারণ তিনি প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম বাংলাদেশি মহিলা যে এখানে টানা চার বার এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। অন্যদের চেয়ে তিনি যোগ্য, তাঁর পাশে দাড়াতে হবে। আমাদের কমিউনিটির জন্যই তাকে বিজয়ী করতে হবে।
বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপেনি আসনের লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির (লিবডেম) প্রার্থী রাবিনা খান বলেন, ‘আমি কয়েকবার নির্বাচনে হেরেছি কিন্তু আমি কমিউনিটি থেকে সরে যাই নি। সবসময় তাদের সঙ্গে ছিলাম, মানুষ আমাকে সব সময় পাবেন। আমি ১২ বছর কাউন্সিলর ছিলাম। আমার অনেক কিছু জানা আছে, ভোটাররাও পরিবর্তন চাচ্ছে এবার।’
লাইম হাউস অ্যান্ড পপলার আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থি এহতেশাম হক বলেন, ‘দল বা স্বতন্ত্র বড় বিষয় নয়; কে মানুষের জন্য খাটতে পারে, কে পাশে থাকতে পারে এটা বড় বিষয়। আমার যোগ্যতা আছে, আমি নানা সামাজিক কর্মকান্ডে কাজ করেছি, কাউন্সিলর ছিলাম। এই আসনের নাগরিকরাই চুড়ান্ত সিদ্বান্ত নেবেন তাঁরা কাকে ভোট দেবেন।’