সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুইদিন পর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পরিবারের উপর হামলার ঘটনার দায়ে ১৯দিন পর উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ভূইয়াসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ (বুধবার) দুপুরে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন আহমদের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন হামলায় আহত প্রার্থী সাইদুর রহমানের ছেলে অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান ঝিনুক।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মধ্যনগর থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজমল হোসাইন।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন আজিম মাহমুদ, সোহেল ভূইয়া, আফসার উদ্দিন, মোবারক ভূইয়া (স্মরণ), বাসেত ভূইয়া, শরীফ ভূইয়া, হুমায়ুন, শরীফ মিয়া, আমিনুর, শমশের আলী, আনোয়ার, আব্দুস সালাম, কাউসার, আব্দুর রহমান, বাবুল, কবীর, রুবেল, আজিজুল, আলমগীর কবীর এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জন।
মামলায় বাদী পক্ষে শুনানী করেন ও উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী তৈয়বুর রহমান বাবুল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল হক।
এছাড়াও বাদী পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আরফান আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট নুরে আলম সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট আব্দুল আজাদ নোমান, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হাসান শাহীন, অ্যাডভোকেট পঙ্কজ তালুকদার, অ্যাডভোকেট ছায়াদুর রহমান তালুকদার, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হুসাইন, অ্যাডভোকেট এইচ এম ওয়াসিম, অ্যাডভোকেট একরাম হোসেন, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক, অ্যাডভোকেট সালেহ আহমেদ সহ প্রমুখ।
উক্ত মামলায় অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান ঝিনুক অভিযোগ করেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আসামীরা নির্বাচনকালীন সময়ে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যা তিনি নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ করায় তারা ক্ষিপ্ত হন এবং নির্বাচনের পরে প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
অভিযোগে উল্লেখ, ৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুইদিন পর ৭-জুন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাইদুর রহমানের বাড়ির সামনের পুকুরঘাটে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাইদুর রহমান এবং তার পরিবার ও স্বজন্দের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক, তার ভাতিজা আজিম মাহমুদসহ অন্যান্য আসামীরা।
মামলায় উল্লেখ, আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাইদুর রহমানের মাথায় দুটি ও হাতে একটি, বাদী আরিফুর রহমানের মাথায়ও দুটি ও হাতে একটি কোপ দিয়ে গুরতর জখম করে। এ দু’জন ছাড়াও হামলায় আহত হন আরো ৫ জন।
এছাড়া মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, আহতদের মধ্যে ৫ জনকে উদ্ধার করে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৪ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরদিন গুরুতর আহত সাইদুর রহমান, আরিফুর রহমান, আজিজুর রহমান ও কামাল মিয়াকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, সাইদুর রহমান ও কামাল মিয়া এখনও ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা প্রসঙ্গে, বাদী অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান ঝিনুক বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন মামলার প্রধান আসামীর ছোট ভাই হাওয়ার ফলে হামলাকালীন সময় থেকেই পুলিশের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তাই হামলার পর স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের না করে ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু আমরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এবং ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আদালত বন্ধ থাকায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়েছে।’
এপ্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি তৈয়বুর রহমান বাবুল বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে মামলাটি আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আদালতের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট।’