সিলেটের বিশ্বনাথে সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিশ্বনাথ থানার সত্তিশ গ্রামের মখলিছুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মখলিছুর রহমান জানান, তাঁর প্রতিবেশী সত্তিশ গ্রামের মৃত মনোহর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান ও হাবিবুর রহমানর এবং তাদের স্বজনরা সন্ত্রাসী, দাঙ্গাবাজ ও চাঁদাবাজ প্রকৃতির লোক। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অপরাধ-অপকর্মের মামলা। তাদের কাছে এলাকার শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষজন জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, মিজানুর রহমান একসময় বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ সরকারি দলের নেতা পরিচয়ে এলাকাইয় প্রভাব বিস্তার করে চলতেন। বর্তমান সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। সন্ত্রাসী হামলা-মামলা, ভাঙচুর, লুটপাট তার কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সরকারদলীয় নেতা পরিচয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর প্রভাব খাটিয়ে তিনি যা ইচ্ছা তা করে চলেছেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তার কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ করলে নেমে আসে হামলা-মামলাসহ নানারকম নির্যাতন-নিপীড়ন। মিজানুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের ভাইদের কাছে এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে মখলিছুর রহমার আরও অভিযোগ করেন, মিজানুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের সাথে তার পরিবারের জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জেরে মিজান ও হাবিব প্রায়ই তার পরিবারকে হত্যাসহ তাদের জানমালের ক্ষতিসাধনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় মিজানুর রহমান ও হাবিবুর রহমান এবং তাদের লোকজন গত ৫ ও ১০ আগস্ট দুই দফা হামলা চালিয়ে তার স্বজনদের গুরুতর আহত করেন এবং তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেন। বিষ ঢেলে তার পুকুরের মাছও মেরে ফেলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মখলিছুর রহমান বলেন, গত ৫ আগস্ট নামাজ শেষে তিনি ও তার দোকানের কর্মচারী (ভাগ্নে) বদরুল আলম রানা বাড়িতে ফিরলে মিজানুর রহমান, হাবিবুর রহমান ও হাবিবুর রহমানের ছেলে তানভীর দলবল নিয়ে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। হামলায় তারা দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করেন। ধারালো দা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে বদরুল আলম রানাকে গুরুতর আহত করেন। এ সময় হাবিবুর রহমানের ছেলে তানভীর বন্দুক দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তানভীরকে বন্দুকসহ হাতেনাতে আটক করে এবং গুলির খোসা উদ্ধার করে। গুরুতর আহত বদরুল আলম রানাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে অজ্ঞাত কারণে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। উপরন্তু বন্দুকসহ আটক তানভীরকে রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেয়।
তিনি বলেন, পুলিশ মামলা না নেওয়ায় মিজান, হাবিব ও তানভীর আরও বেপরোয় হয়ে ওঠেন। আহত বদরুল আলম রানা বাড়ি ফিরলে গত ১০ আগস্ট তারা আবারও হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেন। ফলে দ্বিতীয় দফায় বদরুল আলম রানাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মিজানদের দফায় দফায় হামলা এবং থানায় মামলা না নেওয়ায় মখলিছ গত ১৬ আগস্ট সিলেটের আমল গ্রহণকারী বিশ্বনাথ আদালতে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন, সিলেটের বিশ্বনাথ থানার সত্তিশ গ্রামের মৃত মনোহর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান, হাবিবুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং হাবিবুর রহমানের ছেলে তানভীর ও মিজানুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান। আদালতের আদেশে গত ২৪ আগস্ট মামলাটি রেকর্ডে নিতে বাধ্য হন বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান। যা বিশ্বনাথ থানার মামলা নম্বর-১২ (৮) ২০২২। পরে থানার এসআই মোয়াজ্জেম হোসেনকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।
মখলিছুর রহমানের অভিযোগ, অজ্ঞাত কারণে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন না বিশ্বনাথ থানার ওসি ও তার পুলিশ বাহিনী। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোয়োজ্জেম হোসেন ২৬ আগস্ট মামলার এজাহারনামীয় আসামি তানভীরকে সাথে নিয়ে মামলার তদন্তকাজ করতে ও তানভীরের সাথে সবসময় ওঠা-বসা করতে দেখা গেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় মামলার বাদী হয়ে মখলিছুর রহমান প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর এ সুযোগে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সন্ত্রাসী মিজান ও তানভীররা তার পুকুরে বিষ ঢেলে লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে। তার বৃদ্ধা মাসহ পরিবারের নারী ও শিশুদের অপহরণসহ নানা হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় সিলেট জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা তানভীরের বন্দুক জব্দ ও লাইসেন্স বাতিল করলেও অজ্ঞাত কারণে হামলাকারী তানভীরকে গ্রেপ্তার করছে না বিশ্বনাথ থানার পুলিশ। সন্ত্রাসী হামলার মামলা দিয়ে উল্টো তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসী হামলার মামলার আসামি বিশ্বনাথ থানার সত্তিশ গ্রামের মিজান ও তানভীরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং আক্রান্ত পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জাননো হয়। পাশপাশি কর্তব্যে অবহেলার জন্য বিশ্বনাথ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বদরুল আলম রানা, মাশুক মিয়া, লিলু মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।