ওসমানীনগর-বালাগঞ্জের একমাত্র পত্রিকার এজেন্ট ও বিক্রেতা আব্দুছ ছালামের সংসার চলছে আর্থিক দৈন্যদশায়! মহামারী করোনাকাল থেকে শুরু করে ভয়াবহ বন্যায় তার খবর নেয়নি কেউ! পাননি সরকারী-বেসরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা! কষ্টে যাচ্ছে ৬ সদস্যের সংসারের।
মান সম্মানের ভয়ে কারো কাছে হাত না পেতে চরম ধৈর্য্যের মধ্যদিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তার অভাবী সংসার।
জানা যায়, আব্দুছ ছালাম কাক ডাকা ভোরে প্রতি দিনের তাজা খবর নিয়ে অফিস আদালতে ও পাঠকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন পত্রিকা। ১৯৮৮ সাল থেকে আব্দুছ ছালাম পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন। অনেকেই এ পেশা থেকে সরে গেলেও ছেড়ে যাননি আব্দুছ ছালাম। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এ পেশায় তিনি জড়িয়ে রয়েছেন। বালাগঞ্জ বাস স্টেশন ও ওসমানীনগরের তাজপুর কদমতলাসহ ২ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা করে আসা আব্দুছ ছালামের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার চানপুর গ্রামে।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে পাঠক কমে যাওয়ায় পত্রিকার বিক্রি ব্যবসায় নেমেছে ধ্বস। পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হওয়ায় অনেকেই এ পেশা বদল করেছেন। কিন্তু আব্দুছ ছালাম শেষ বয়সেই ধৈর্য্যের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন পত্রিকার বিক্রির কাজ।
তার সাথে কথা বলে জানা গেছে- পত্রিকা বিক্রিতে খুব একটা লাভ না হলেও পত্রিকা বিক্রি তার পেশা ও নেশা হয়ে গেছে। যার কারণে এ পেশা ছেড়ে যেতে চাইলেও যেতে পারছেন না। অন্য কাজে তার মনও বসে না। এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সময় তার পত্রিকা বিক্রি বন্ধ হলেও কেউ তার খবর রাখেনি! বন্যায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি!
বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার অফিস-আদালতে পায়ে হেঁটে আবার কখনো বাইসাইকেল করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে দৈনিক ৪ শত টাকা রোজগার করতে তার ১৫০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি দৈনিক আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, ঠিকমত তার ঘরে ভাতও ঝুটছে না।
এ বিষয়ে ২ উপজেলার সংবাদপত্র এজেন্সির মালিক ও বিক্রেতা আব্দুছ ছালাম বলেন, ‘পত্রিকা বিক্রি আমার নেশা ও পেশা হয়ে গেছে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রিন্ট পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে। এখন আর আগের মত পত্রিকা বিক্রি না হওয়ায় আমার ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। আমি গরীব মানুষ, বন্যায় আমার ঘর ভেঙ্গে গেছে কিন্তু সরকারি-বেসরকারী কোন সাহায্য সহায়তা পাইনি।
বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে প্রিন্ট পত্রিকা প্রায় তিন যুগ ধরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ছালাম ভাই। তিনি একজন গরীব মানুষ। তার খোঁজখবর নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল ধর বলেন, ‘দুর্যোগে সংবাদপত্র এজেন্ট ও সাংবাদিকদের খোঁজ রাখার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম বলেন, ‘সালাম ভাই একজন সৎ ও সাধারণ মানুষ। পত্রিকা বিক্রি করে সংসার জীবন পরিচালনা করেন এটা জানি, তবে সরকারী-বেসরকারি সহায়তা পেয়েছেন কি না আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি দেখব।’