সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় দুই মাস ধরে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। কিছুদিন আগে পানি কমলেও ফের পানি বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষ বন্যার কারণে নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে থাকছেন। যার ফলে মানুষের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি পশুর খাদ্য সংকটও তৈরি হয়েছে। এর মাঝে শুরু হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। গো-খাদ্য সংকট থাকায় বন্যাকবলিত মানুষ তাদের গৃহপালিত পশুগুলো হাটে নিয়ে কম দামে বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের টুকেরবাজার পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে গবাদিপশু নিয়ে এসেছেন বন্যাকবলিত মানুষ। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে উপজেলায় বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। উপজেলার সকল হাওর ও ফসলি জমিতে পানি থাকায় ও বন্যার পানিতে কৃষকদের বাড়ি-ঘরে থাকা সংরক্ষিত গবাদি পশুর খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে আছেন তারা। যার ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে গবাদি পশু কম দামে হলেও বিক্রি করতে চাইছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিনিই বসবে পশুর হাট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা থেকে কম দামে গবাদিপশু ক্রয়ের জন্য এসেছেন ব্যাপারি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কম দামে গরু ক্রয় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রয় করছি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় কম দামে গবাদি পশু বিক্রি হবে জেনে গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) রাতে সিলেটে এসেছি। শুক্রবার সকাল থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকেরবাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ৫টি ভালো মানের গরু ক্রয় করেছি। এগুলো পিকআপ গাড়িতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়ে বিক্রি করে ভালো লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
একই এলাকা থেকে কোম্পানীগঞ্জে গরু ক্রয় করতে এসেছেন ব্যাপারি আনোয়ার আলী। তিনি বলেন, বন্যার কারণে সিলেটে গরুর দাম কম থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এখানে এসে কয়েকটি গরু ক্রয় করেছি। আরও কয়েকটি গরু ক্রয় করে নবীনগর উপজেলার বাইশমৌজা বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।
উপজেলার টুকেরবাজারে ৫টি পশু বিক্রি করতে আসা বটেরতল গ্রামের হযরত আলী বলেন, বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ির অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার সময় পরিবারের সদস্যদের থেকে বেশি চিন্তা করেছি গবাদি পশুগুলোকে নিয়ে। বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে গবাদি পশুর খাদ্য। কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গাছের পাতা ও ভুষি খাওয়াচ্ছি। গো-খাদ্য সংকট থাকায় গবাদি পশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন-রাত কাটছে। আজ (শুক্রবার) ৫টি গরু বাজারে নিয়ে এসেছি। এর মাঝে কম দামে ২টি গুরু বিক্রয় করেছি। বাকি গরুগুলোও কম দামে হলেও বিক্রি করে দেব।
আলমাছ আলী নামের এক বিক্রেতা বলেন, এক লাখ দশ হাজার টাকা দামের একটি গরু মাত্র ৯৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বন্যার পানিতে গো-খাদ্য নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে গবাদি পশুগুলোর ওজন কমে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো বিক্রয় করতে না পারলে আরও কিছুদিন পরে আরও কম দামে বিক্রয় করতে হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাথরের ব্যবসা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনোয়ার হোসেন। তিনি শুক্রবার বিকেলে একটি গুরু ৬৩ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। তিনি জানান। এই গরুটি পিকআপ গাড়িতে করে নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাবেন। এতে করে কয়েক হাজার টাকা খরচ হবে। তারপরও তার ভালো লাভ হবে। তিনি বলেন, গরুটি ৬৩ হাজার টাকায় কিনেছি। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ক্রয় করলে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাগত।
নভাগী গ্রামের ইরন মিয়া বলেন, খাদ্য সংকট থাকায় গরুর ওজন কমে গেছে। তাই বাজারে এনে কম দামে গরু বিক্রয় করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় কম দামেও বিক্রি করতে পারছি না।
সিলেট শহরতলীর টুকেরবাজার থেকে কোম্পানীগঞ্জে কোরবানির পশু ক্রয় করতে এসেছেন রাকিব হাসান। তিনি বলেন, ৯৮ হাজার টাকায় সাড়ে ৩ মন ওজনের একটি গরু ক্রয় করেছি। তুলনামূলকভাবে গরুটির দাম কম হয়েছে। শহর থেকে ক্রয় করতে গেলে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি লাগত।
টুকেরবাজারের পশুর হাটের ইজারাদার মো. ইয়াকুব আলী বলেন, বাজারে প্রচুর গরু এসেছে। কৃষকেরা কম দামে গরু বিক্রি করছেন। তবে বাজারে ক্রেতা কম।