চা-শ্রমিকদের দেওয়া কথা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিলেটের লাক্কাতুরা চা-বাগানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবায় তিনি উপহার দিয়েছেন একটি অ্যাম্বুলেন্স।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের লাক্কাতুরা চা-বাগান এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এস এম জিয়াউল আহসানের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট জাফর চৌধুরী বুলবুলের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানের মধ্যে এখানেই আমরা প্রথম অ্যাম্বুলেন্স পেলাম। সিলেটের চা-বাগানে অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে এই দেশ দিয়েছেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এখন তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, জেমস ফিনলে’র সিও এস এ এ মাশরুর হোসেন, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুশরাত আজমিরি হক, ন্যাশনাল টি কোম্পানির উপ-মহা ব্যবস্থাপক কে এম এমদাদুল হক, ব্যবস্থাপক আক্তার শহীদ ও উপ-ব্যবস্থাপক এ আর এম জিলকার চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসনের এনডিসি পল্লব হোম দাস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসানুল আলম, চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা, ৬ নম্বর টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাসেম চৌধুরী, ৮ নম্বর ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্য দিপালী গোয়ালা প্রমুখ।
অ্যাম্বুলেন্স গ্রহণ করেন এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এস এম জিয়াউল আহসান, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানসহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
এর আগে গতকাল বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটে এসে পৌঁছায় চা-শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অ্যাম্বুলেন্স।
প্রসঙ্গত, গত ৩ সেপ্টেম্বর লাক্কাতুরা চা-বাগান এলাকার গলফ মাঠে চা-শ্রমিকরা ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই দিন ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে নারীদের পক্ষ থেকে চা-শ্রমিক শ্যামলী গোয়ালা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি ছাড়া আমাদের কেউ নেই। আপনি আমাদের পিতা-মাতা। আমরা যখন আন্দোলন শুরু করি তখন আমাদের একটাই চাওয়া ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটিবার কথা বলবো। সেসময়ে আপনি নিজ থেকে আমাদের হয়ে কথা বলেন এবং মজুরি বাড়িয়ে দেন। এজন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
ওই সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলেছিলেন, আমরা চিকিৎসাসহ নানা ভোগান্তিতে রয়েছি। অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাবো সে ব্যবস্থা নেই। আমাদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিন। সেইসঙ্গে চা-শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য বাগানে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করার দাবি জানান।
তাদের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী চা-শ্রমিকদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী চা-শ্রমিকদের বক্তব্য শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, ‘আমার তো বাবা-মা কেউ নেই, আপনারাই আমার সব।’