সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ভুয়া চুক্তিনামা ব্যবহার ও তথ্য গোপন করে বারিয়া নদী জলমহাল ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলার বারিয়া নদীর পাড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সম্রাট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য বারিয়া নদী জলমহাল ইজারা নেওয়ার জন্য বারিয়া নদীর পাড় মৎস্যজীবী সমিতি ও বালিজুড়ি সমবায় সমিতি আবেদন করে। গত ৪ আগস্ট উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুযায়ী এ জলমহালের পুনরায় তদন্তের জন্য তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু বালিজুড়ি গ্রামের মৃত যোগেশ চন্দ্র দাসের ছেলে নিখিল চন্দ্র দাসের স্বাক্ষর নকল করে বালিজুড়ি সমিতি অফিসঘরের জন্য জায়গা ভাড়া নেওয়ার ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করে তা তদন্তে পেশ করে। পরে ইউএনও’র মৌখিক নির্দেশে ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার আব্দুল মোনায়েম খান বালিজুড়ি সমিতির পক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে একটি ভুয়া প্রত্যয়ন দেন। ওই প্রত্যয়নের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত কমিটি বালিজুড়ি সমিতির পক্ষে ইজারার জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু সার্ভেয়ারের প্রত্যয়নে কী ছিল তা বারিয়া নদীর পাড় সমিতিকে জানানো হয়নি। ফলে বারিয়া নদীর পাড় সমিতির সভাপতি গত ২৮ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইনে তথ্যের জন্য এসিল্যান্ডের কাছে আবেদন করেছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার নিখিল সশরীরে উপস্থিত হয়ে তার স্বাক্ষর জালের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান। আর এটি জানার পর ওইদিনই দ্রুত বালিজুড়ি সমিতিকে জলমহালটি ইজারা দেওয়া হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সার্ভেয়ারের দেওয়া লিখিত প্রত্যয়নের ওপর ভিত্তি করে বালিজুড়ি সমিতির অনুকূলে প্রতিবেদন দিয়েছি।’
সার্ভেয়ার আব্দুল মোনায়েম খান দাপ্তরিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, ইউএনও’র মৌখিক নির্দেশে তিনি এমন প্রত্যয়ন দিতে বাধ্য হয়েছেন। যদি পুনরায় তদন্ত হয় তবে তিনি সঠিক তথ্য প্রকাশ করবেন।
অভিযোগকারী সম্রাট বলেন, ‘নিখিল তার স্বাক্ষর জালের বিষয়টি ইউএনওকে জানানোর পরে তিনি দ্রুত ইজারা প্রদান করেছেন।’
বালিজুড়ি সমিতির সভাপতি ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘নিখিলের চুক্তির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। বাবু (ব্যবসায়ী অংশীদার) নামের একজন নিখিলের সাথে চুক্তি করেছে।’
সামসুল হুদা বাবু বলেন, ‘নিখিল কারো ভয়ে এখন চুক্তিনামায় স্বাক্ষরের কথা অস্বীকার করছে।’
এ ব্যাপারে নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘সমিতির ঘরের (কার্যালয়) জায়গাটি আমার নয়। আমি চুক্তিনামায় স্বাক্ষর দেইনি। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারের সাথে দেখা করে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
ইউএনও মুনতাসির হাসান বলেন, ‘সার্ভেয়ার যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন তাহলে তার দায় সার্ভেয়ারের। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজারা দেওয়া হয়েছে।’