দেশে প্রকৃত রাজনীতিক খুঁজে পাওয়া যায় না : সুলতানা কামাল

দেশে বর্তমানে প্রকৃত রাজনীতিক খুঁজে পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, রাজনীতিকরা নীতিনির্ধারণ করেন। কিন্তু কোনো রাজনীতিক নেই, যার কাছে গেলে জনগণের ভাবনার কথা বলা যাবে এবং সেটি বাস্তবায়ন হবে। তাঁদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। যদি রাজনীতিকরা নির্বাচনকে নির্বাচন মনে করেন তাহলে নির্বাচনের আগে হয়তো আমাদের একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে। সে সময় রাজনীতিকরা ভোট চাইলে জনগণের ভাবনার বিষয়টি জানাতে হবে।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত নাগরিক ভাবনা শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

‘হাওর টিলা-বন রক্ষা করে পর্যটন’, এ বিষয়কে সামনে রেখে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট এবং পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট সিলেট এ সভার আয়োজন করে।

সভায় সুলতানা কামাল আরও বলেন, দেশে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। যা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যাতে আমাদের আহত, বিরক্ত হতে হচ্ছে। আমরা যে প্রকৃতিক পর্যটনের কথা বলছি সেগুলোর সঙ্গে যার চারিত্রিক বৈশিষ্টের কোনো মিল নেই। বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ প্রতিবেশ। এর থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নিজেদের জোর বাড়াতে হবে। জনগণের পক্ষ থেকে একটি কার্যপত্র তৈরি করতে হবে। যাতে আমরা রাজনীতিক কিংবা নীতিনির্ধারকদের কাছে দফায় দফায় দাবি উপস্থাপন করতে পারি। রাজনীতিকদের সদিচ্ছা আদায় করে নিতে হবে।

সভায় পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি, স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন সভাপতিত্ব করেন। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরিফ জামিল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ জহিরুল হক। বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম-এর সঞ্চালনায় বিষয় ভি‌ত্তিক আলোচনায় হাওর পর্যটন বিষয়ে বক্তব‌্য উপস্থাপন করেন সংবাদকর্মী উজ্জ্বল মেহেদী ও আরবান ট‌্যু‌রিজম নিয়ে বক্তব‌্য উপস্থাপন করেন স্থপ‌তি রাজন দাস ।

সভায় বক্তারা বলেন, প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠে। কিন্তু সেটি পরবর্তীকালে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কোনো ব্যবস্থাপনা থাকে না। দেশের কোথায় কোন পর্যটন কেন্দ্রে কতজন যাওয়া উচিত সেটিরও কোনো দিক নির্দেশনা নেই। যদিও উন্নত দেশগুলোতে এর নির্দিষ্ট একটি নির্দেশনা রয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড় তৈরি করা হয়। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাতে পলিথিন একেবারেই ব্যবহার করা না হয়, সে পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। এজন্য সরকারিভাবে সদিচ্ছার প্রয়োজন এবং অন্যদেরও সচেতন হওয়া দরকার।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে শরিফ জামিল বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়েলাইজেশনের নামে আমরা পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস করে ফেলছি। আমরা সংরক্ষণের নামে নষ্ট করছি। হাওরের মধ্যে এখন জিপিএস নিয়ে চলতে হচ্ছে। কারণ এখন হাওর আর আগের হাওর নেই। সেখানে ইট-পাথরের কাঠামো হচ্ছে। সংরক্ষতি বন, হাওর আমরা নষ্ট করে ফেলছি। এর থেকে উত্তোরণ প্রয়োজন।

সভায় নাগরিক ভাবনা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, বাপা সিলেটের সভাপতি জামিল আহমদ চৌধুরী ও সহসভাপতি প্রফেসর নাজিয়া চৌধুরী, উদীচী সিলেটের সভাপতি এনায়েত হোসেন মানিক, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট-এর আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, দৈনিক পূণ্যভূমি সম্পাদক আবু তালেব মুরাদ, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গাজী সাইফুল হাসান, সংস্কৃতিকর্মী সুজিত শ্যাম জন, প্রাণি অধিকার বিষয়ক সংগঠন প্রাধিকার সভাপতি মেহেদী হাসান, গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটির উইং প্রধান শাফিন মুজনাবিন খান, শিশু কিশোর সংগঠন ঊষার সভাপতি নিঘাত সাদিয়া প্রমুখ।