সম্পত্তি আত্মসাত করতে দুলাভাই এনামুল হক মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন বলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন ব্রিটিশ নাগরিক ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী দর্শনদৈউড়ি এলাকার পায়রা ৩৭/৩৮নং বাসার ইয়াসমীন চৌধুরী। একই সাথে এনামুল হক কর্তৃক মিথ্যা বানোয়াট তথ্য প্রচার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে ১৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে আম্বরখানা এলাকার এনামুল হক চৌধুরী উক্ত ইয়াসমীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা তথ্য অপপ্রচার করেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত পাল্টা এক সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসমীন চৌধুরী উপরোক্ত এনামুল হক চৌধুরী প্রদত্ত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।
লিখিত বক্তব্যে ইয়াসমীন চৌধুরী উল্লেখ করেন তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী। তিনি বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ গ্রামের মরহুম আবদুল মুকিত চৌধুরীর মেয়ে। গরীব দুঃখী মানুষের প্রতি ভালবাসা, ন্যায়নীতির পক্ষে অবস্থান নেওয়াসহ মরহুম পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আজ নিজের পরিবারের সদস্যদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন। শুধু পরিবার নয় আরো কিছু লোভী ও অত্যাচারী নিকটাত্মীয়ের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে বার বার জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি। মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলায় জড়িয়ে তাকে হয়রানি করে সহায় সম্পত্তি আত্মসাত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তার বোন জামাই এনামুল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে এনামুল হক তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া মানহানিকর বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এমনকি ইয়াসমীন চৌধুরী তার পৈতৃক সম্পত্তিতে বসবাস করলেও এনামুল হক চৌধুরী তার বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনামুল হক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ৪ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় একদল সন্ত্রাসী নিয়ে ইয়াসমীন চৌধুরী তার বাসার গেটে গিয়ে তাকে গালাগালি ও হুমকি দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে ঐদিন তিনি সেখানে একাই গিয়েছিলেন। কারণ গত সেপ্টেম্বর মাসে ইয়াসমীন চৌধুরীর কয়েকজন আত্মীয় পারিবারিক বিরোধের একটি সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে গেলে এনামুল হক চৌধুরী তা নাকচ করে দেন। ইয়াসমীন তাদের এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলেছিলেন।
এনামুল হকের মদদে দায়ের করা একটি মিথ্যা মামলায় তার নিরীহ একজন ম্যানেজার রাহিন আহমদকে ১ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মামলায় ৫ দিন কারাভোগ করে রাহিন। এই মিথ্যা মামলায় তার ব্রিটিশ নাগরিক কিশোরী মেয়ে আম্বার আরা কে ই কেও আসামী করা হয়। তিনি ৪ ডিসেম্বর এনামুল হকের বাসায় গিয়ে মামলার বিষয় ও ম্যানেজারকে জামিন করার ব্যাপারে এনামুল হকের সাথে আলাপ করতে যান। এসময় তার চাচাতো ভাই এমদাদুল হক চৌধুরী ইয়াসমীন চৌধুরীকে মারতে আসেন। এনামুল হক বাইরে এসে ইয়াসমীনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও মারপিট করে আহত করেন। এনামুল হক তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থানায় জিডি এন্ট্রি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসমীন চৌধুরী বলেন, এনামুল হক তাদের সম্পত্তির মালিক না হয়েও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজে মালিক সেজে দোকানকোঠা ও বাসা ভাড়া চুক্তি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। এসব প্রতারণার সকল প্রমাণ আছে। ২০১২ সালে এনামুল হক ও তার স্ত্রী বিদেশী সম্পত্তির উকিল নাজমিন চৌধুরী, মা রওশন আরা চৌধুরী ও রীমার সহযোগিতায় ইয়াসমীন চৌধুরীর বাবার লন্ডন ও সিলেটের অনেক সম্পত্তি ইয়াসমীনের ভাই নাজমুল হাসান চৌধুরী মিন্টুর দখলে চলে যায়। তাছাড়া নাজমিন চৌধুরী তার বাবার আম্বরখানা বড়বাজারের সম্পত্তিও জালিয়াতি করে আত্মসাত করেন। তিনি এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এনামসহ তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াসমীন চৌধুরীর উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছেন। এনামুল হক ইয়াসমীন চৌধুরীর বাবার টাকায় গরু কিনে বাবার গোদাম ঘরে রাখেন। তাছাড়া গরু জবাই করেন এবাদুল হক চৌধুরী ও তোফায়েল। অথচ তারাই ইয়াসমীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, আলী ডোর এন্ড হার্ডওয়ার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ করে আমি আমার মেয়ে ও আমার প্রজেক্ট ম্যানেজার, আমার গাড়িচালক ও নিরীহ জুয়েলের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করেন জনৈক রফিক আলী। অথচ তাকে তিনি কখনো দেখিনি ও চেনেন না। তাছাড়া এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্থিত্বই আম্বরখানা এলাকায় নেই। ২০১৫ সাল থেকে তাদের বাসা দখলের উদ্দেশ্যে জনৈক শামীম আহমদকে ভাড়া দেন ইয়াসমীনের পরিবার। পরবর্তীতে তার বাসায় এসে ভূয়া চুক্তিনামায় শামীমের অবস্থান দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করেন ইয়াসমীন চৌধুরী। এতে করে উক্ত শামীম তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করেন। পরে অবশ্য মামলা প্রত্যাহার করে নেন। লাভদেশ একটি রেজিস্ট্রাড ব্রিটিশ কোম্পানি। এই কোম্পানি থেকে তিনি গরিব ও দুখী মানুষকে সাহায্য করেন। নিজেরা ঘাম ঝরিয়ে টাকা সংগ্রহ করে গরীবদের সাহায্য করেন। রানা প্লাজার ভিকটিমসহ গরীব দুঃখী মানুষের জন্য নিরলসভাবে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ তিনি বলছেন এদের নামে টাকা তুলে তিনি নাকি আত্মসাত করছেন। এনাম সন্ত্রাসী নিয়ে ইয়াসমীন চৌধুরীর বাসার পিছনের গেইট কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করে। যে ঘটনায় তিনি মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলেন তার পরিবারের সদস্যরা পিতার অছিয়তনামা অনুযায়ী মসজিদ, মাদ্রাসাসহ এতিম গরীবদের সাহায্য করেন না। তিনি অবিবাহিত থাকাকালীন সময়ে নিজের রোজগারের টাকা থেকে মরহুম বাবাকে প্রতিমাসে ৩৫০ পাউন্ড করে দিতেন। তাছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২২সাল পর্যন্ত এনাম ও ইয়াসমীনের ভাই বোন ও চাচাতো ভাইয়োর দোকান ও বাসা ভাড়ার টাকা নিয়েছেন। তাকে কোন টাকা দেননি। অথচ এনামুল হক বলছেন ইয়াসমীন নাকি বিরাট অংকের টাকা আত্মসাত করেছেন। এনামুল হক বলেছেন ইয়াসমিন চৌধুরী লন্ডনে পঙ্গু ভাতা নিয়ে চলেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইয়াসমীনের অনুপস্থিতিতে এনামুল হক তাদের বাসা ব্যবহার করে ২ লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ বিল রেখে যান। তাদের বাসায় তিনি ব্যবসা করেন ও তার ভাগনি রিমি ও এনামের তার পরিবার ইয়াসমীনের বাড়িতে বিনাভাড়ায় বসবাস করেন।
এনামুল হক চৌধুরী তার মেয়ের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ১০ জুলাই রাত ১টার দিকে আলীনগরের তার বাড়িতে এসে এমদাদুল হক চৌধুরী তাকে লাঞ্ছিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসমীন চৌধুরী উল্লেখ করেন, জনৈক সালেহ আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৭ জুলাই তিনি একটি জিডি এন্ট্রি করেন। উক্ত ব্যক্তি ২০১৯ সালে তার প্রয়াত বাবার বাড়িতে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। ইয়াসমীনের পরিবারের সদস্যরাও তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। তার নিজের মা প্রয়াত বাবার সম্পদ নিয়েও জালিয়াতি করেছেন। ইয়াসমীনের দাবি তার বাবা আব্দুল মুকিত চৌধুরী (মাখন মিয়া) খুন হয়েছেন। আর এ কারণেই অনেককে জেলে যেতে হবে। এনামুল হককে ইয়াসমীনের স্বজনরা শেল্টার দিয়ে তার বাবার জমি আত্মসাৎ করছেন। তার পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন এনামুল হক। ইয়াসমীন ও তার মেয়ে আম্বারা চৌধুরী কে ই কে মিথ্যা মামলা এফআইআর করে অপমান করেছেন। প্রজেক্ট ম্যানেজার রাহিন আহমদ সহ নিরীহদের সাজানো মামলায় জড়িয়ে হেনস্থা করেছেন। তিনি অনধিকার চর্চা করে নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন।
এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি বলেন দেশে তিনি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি বিচার চান।