মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত একটি রাবার প্রক্রিয়াজতকরণ কারখানা নিয়ে স্থানীয় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ওই কারখানার দুর্গন্ধে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে এলাকার বাতাস। চর্তুদিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিদিন বিকেলে অসহনীয় সময় পার করেন মানুষ।
জানা গেছে, কারখানাটি সরানো বা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি। কোনো প্রতিকার না পেয়ে এলাকাবাসী বুধবার (৯ নভেম্বর) কুলাউড়া পৌরসভার মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।এর আগে মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। তাতেও কোনো সুফল না পেলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় লোকজন জানান, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গোগালীছড়ার পাড়ে ২০২১ সালে ন্যাশনাল লোটেক্স অ্যান্ড এগ্রো কেমিক্যাল লিমিটেড নামে রাবার প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এই কারখানার এক পাশে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ও পূর্ব পাশে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার প্রবীণ আব্দুল জলিল, আব্দুর রহমান, কদর আলী, আখলাছ মিয়া, মশাহিদ আলী ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন। তাদের অভিযোগ, কারখানাটির গন্ধই হচ্ছে প্রধান সমস্যা। গন্ধ যখন এলাকায় ছড়ায় তখন বাতাস এতটাই গন্ধযুক্ত হয় যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গন্ধে একজন সুস্থ মানুষকেও বমি করতে হয়।
বিষয়টি সরেজমিনে যাচাই করতে গেলে সেখানকার দুর্গন্ধে এই প্রতিবেদকের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। নারী-পুরুষ সকলের একই অবস্থা।
তারা জানান, কারখানার বর্জ্য ফেলা হয় পাহাড়ি গোগালীছড়ায়। এতে দূষিত হয় ছড়ার পানি। ইতোমধ্যে এলাকার আব্দুর রহমানের ২০টি, কদর আলীর ২৩টি ও কামরুল ইসলামের ২৮টি হাঁস দূষণে মারা গেছে। এমনকি কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের হাঁস-মোরগ পালন বন্ধ হয়ে গেছে বলে এলাকার নারীরা জানান। বিশেষ করে বিকেলবেলা এই গন্ধ সহ্য করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইতোপূর্বে ২০২১ সালে ১৫ ডিসেম্বর এলাকার শতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষর করে একটি লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেন। সেই লিখিত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, দুর্গন্ধের কারণে এলাকার শিশু ও বয়স্ক মানুষের শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। কেমিক্যালসহ রাবারের বর্জ্য পাহাড়ি গোগালীছড়ায় পড়ার কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এবং পানি দূষণ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ন্যাশনাল লোটেক্স অ্যান্ড এগ্রো কেমিক্যাল লিমিটেডের প্রধান উদ্যোক্তা রিয়াদ জানান, পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই তারা ব্যবসা শুরু করেছেন।
গন্ধ ও পরিবেশ বিনষ্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, নদীর দুই কূলে মানুষের খোলা পায়খানা। পরিবেশ সেখান থেকে বিনষ্ট হচ্ছে। তারা যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন। একটি পক্ষ তাদেরকে হয়রানির উদ্দেশে এসব অভিযোগ করছে।
কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ জানান, এক বছর আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করে দেন। এলাকাবাসী যখন আবার অভিযোগ করেছেন, তখন তাদেরকে ডেকে গন্ধ কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন।