ইরানে সঠিকভাবে হিজাব না করায় গ্রেপ্তার তরুণী মাহসা আমিনির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং এর জেরে চলমান বিক্ষোভ সহিংসপন্থায় দমনের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে হিজাব করতে অনাগ্রহী নারীদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধের আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
মাহসার মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে মঙ্গলাবার বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাই-কমিশনার নাদা আল-নাশিফ।
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ইরান।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ইরানের ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
এই পোশাকবিধি অনুযায়ী নারীদের জনসমক্ষে চুল সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখতে হয় এবং লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। আর বিষয়টি নিশ্চিতের দায়িত্ব রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ শাখা- নৈতিকতা পুলিশের ওপর।
পুলিশ হেফাজতে মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে রাজধানী তেহরান এবং দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর মাশহাদসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছে। সাধারণ জনগণের সঙ্গে এতে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, ২২ বছর বয়সী মাহসার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তথাকথিত নৈতিকতা পুলিশ তাকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিল। তবে ইরানি কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাভাবিক কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, মাহসা আমিনির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলো অবশ্যই একটি স্বাধীন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে তদন্ত করা উচিত।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযোগ উঠেছে, তারা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় সহিংস আচরণ করছে। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন।
বিবৃতিতে আল-নাশিফ ইরানের বাধ্যতামূলক পর্দা আইন নিয়ে উদ্বেগ জানান। তিনি বলেন, ‘যারা হিজাব করতে চায় না তাদের টার্গেট, হয়রানি এবং আটক বন্ধ করতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব চাপিয়ে দেয়ার মতো বৈষম্যমূলক আইন ও প্রবিধান থেকে বের হয়ে আসতে হবে ইরানকে।’