মরমী কবি বাউল হাছন রাজা। আজ তাঁর শততম প্রয়াণবার্ষিকী। মানবতা সাধনার একটি রূপ হলো মরমী সাধনা। হাছন রাজার গান এবং দর্শন পাওয়া যায় এ সাধনায়।
তাঁর রচিত গান শুনলে মনে আধ্যাত্মবোধ জাগ্রত হয়। এক সময়কার প্রতাপশালী অত্যাচারী জমিদার ছিলেন হাছন রাজা। পরে তিনি একজন দরদী জমিদার এবং মরমিয়া কবি ও বাউল সাধক হয়ে ওঠেন।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) তার প্রয়াণবার্ষিকী। এই ডিসেম্বর মাসেই জন্ম হয়েছিল তাঁর। আবার শূন্যের মাঝে ঘরও বানিয়েছিলেন এই ডিসেম্বরে।
কবি জন্মেছেন সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে। ৭ পৌষ ১২৬১ ও ২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে (ইংরেজী সাল অনুযায়ী) দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী এবং মোসাম্মৎ হুরমত জান বিবির ঘর আলোকিত করে জন্ম হয় হাছনের। হুরমত বিবি ছিলেন আলী রাজার খালাতো ভাই আমির বখ্শ চৌধুরীর নিঃসন্তান বিধবা। পরবর্তীতে হাছন রাজার পিতা আলী রাজা তাকে পরিণত বয়সে বিয়ে করেন। হাছন রাজা ছিলেন তার দ্বিতীয় পুত্র।
দেখতে বেশ সুপুরুষ ছিলেন হাছন। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। তিনি সহজ-সরল সুরে আঞ্চলিক ভাষায় প্রায় সহস্রাধিক গান এবং পংক্তি রচনা করেছেন। এছাড়াও আরবী ও ফার্সি ভাষায় ছিল বিশেষ দক্ষতা।
মরমী কবির পূর্বপুরুষের অধিবাস ছিল ভারতের উত্তর প্রদেশের অয্যোধ্যায়। বংশ পরম্পরায় তারা হিন্দু ছিলেন। অতঃপর তারা দক্ষিণবঙ্গের যশোর জেলা হয়ে সিলেটে এসে থিতু হন। তার দাদা বীরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব মতান্তরে বাবু রায় চৌধুরী সিলেটে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
যৌবনে কবি ছিলেন ভোগবিলাসী এবং সৌখিন। বহু নারীর সাথে মেলামেশা করেছেন। প্রতি বছর, বিশেষ করে বর্ষাকালে, নৃত্য-গীতের ব্যবস্থাসহ নৌকাবিহারে চলে যেতেন এবং বেশ কিছুকাল ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিজেকে নিমজ্জিত করে দিতেন। এই ভোগবিলাসের মাঝেও হাছন প্রচুর গান রচনা করেছেন। বাইজী দিয়ে নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্রসহ এসব গান গাওয়া হতো। সেই গানের মাঝেও অন্তর্নিহিত রয়েছে নশ্বর জীবন, স্রষ্টা এবং নিজের কৃত কর্মের প্রতি অপরাধবোধের কথা।
সুনামগঞ্জ শহরে তেঘরিয়া এলাকায় সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। এটি এখন সুনামগঞ্জের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
ভক্তদের দাবি জাদুঘরটির সংস্কার করা প্রয়োজন। নইলে চলছে না। কারণ, গত বন্যায় এর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মূল্যবান জিনিসপত্র রক্ষা করতে হলে এর সংস্কারের বিকল্প নেই।