লাখাই উপজেলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি সুরমা হিজড়া সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। লক্ষ্য পূরণে তার সগোত্রীয়দের নিয়ে এবং তাদেরকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
একসময় সে নিজেকে আড়াল করে রাখতো। কিন্তু বিগত ২০২১ সালের শেষদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে ও ক্রিশ্চিয়ান এইড এর কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত ওয়েব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রকল্পের আওতায় লাখাই উপজেলা এডভোকেসী নেটওয়ার্ক কমিটির ভাইস চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার সুবাধে সমাজে সে নিজেকে সম্পৃক্ত করার প্রয়াস চালাতে থাকে। মনের সব জড়তা ও হীনমন্যতাকে দূরে ঠেলে নিজেকে সমাজের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এডভোকেসী নেটওয়ার্ক কমিটির মাধ্যমে তার মনোবল বেড়ে যায় বহুলাংশে। এরই এক পর্যায়ে বিগত ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাখাই উপজেলার ৪ নম্বর বামৈ ইউনিয়ন পরিষদ ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেন।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন সুরমা হিজড়া। তবে স্থানীয় সচেতন মহলের একটি অংশ ও এডভোকেসী নেটওয়ার্ক কমিটি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি সম্পৃক্ততার ফলে ও হিজড়াদের বিষয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাতে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা সম্ভব হয়। সচেতন মহলের প্রচেষ্টা ও সুরমার স্বীয় চেষ্টা, অদম্য মনোবলে বলিয়ান সুরমা হিজড়া শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠ থেকে তার ৪ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরণ করেন। তবুও তিনি মনোবল হারাননি। আবারও আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে আসছেন।
উপজেলার ৪ নম্বর বামৈ ইউনিয়নের ভাদিকারা গ্রামের মৃত মালি বক্সের ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে ৪র্থ সন্তান সুরমা হিজড়া তার স্বগোত্রীয়দের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের সংগঠিত করে একসাথে চলার প্রত্যয় নিয়ে গঠন করেছেন লাখাই উপজেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতি। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। এ কমিটির পূর্নাঙ্গ গঠন প্রক্রিয়া চলমান।
হিজড়াদের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি সমাজের দরিদ্রদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন। বিগত মাসছয়েক পূর্বে তিনি তাঁর গ্রামের এক অসহায় সনাতন ধর্মাবলম্বী মহিলাকে তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে হবিগঞ্জ জেলা শহরে নিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করান। এছাড়াও তিনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ও এডভোকেসী নেটওয়ার্ক কমিটির সকল কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন করে আসছেন।
আলাপকালে সুরমা হিজড়া বলেন, ‘লাখাইয়ে এডভোকেসী নেটওয়ার্ক কমিটিতে আমাকে যুক্ত করায় আমি আমার কমিউনিটির জন্য কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিগত নির্বাচনে এ কমিটির চেয়ারপার্সন মো. বাহার উদ্দিনসহ অনেকে আমার প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্নভাবে সাহায্যে সহযোগিতা করেছেন। নানাভাবে উৎসাহ ও সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন।’
তিনি আরোও বলেন, ‘আমরা হিজড়ারাও চাই সমাজে সম্মানজনক পেশা নিয়ে বাঁচতে। বিয়েবাড়ি ও হাটবাজারে চাঁদা নেওয়া আমাদের কাম্য নয়। আমরা বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে ওয়েব ফাউন্ডেশন আমাদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করাতে আমরা আশাবাদী। আমরা আমাদের পূর্বের পেশা থেকে সরে আসতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এডভোকেসী নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে আমাদের সমাজের মূলধারায় যুক্ত করায় আমি ওয়েব ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’