সেতুতে যা করা যাবে না

আবেগের পদ্মা সেতুতে মানতে হবে কিছু নিয়ম। বিশেষ করে সেতুতে গাড়ি থামিয়ে করা যাবে না আবেগের বহিঃপ্রকাশ। নিরাপত্তার প্রয়োজনেই সরকার তথা সেতু কর্তৃপক্ষ বেঁধে দিয়েছে এসব নিয়ম।

পদ্মা সেতুর দুই পাশে দুটি থানা চালু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহগঞ্জ উপজেলার মেদেনীমন্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়নকে একত্রিত করে ‘পদ্মা সেতু উত্তর থানা’ ও শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সীমানায় হয়েছে ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা’।

সেতু ও সেতু-ঘেঁষা এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ দুটি থানা গঠন করেছে সরকার। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও পদ্মা সেতুসহ গোটা এলাকাটিকে কেপিআই (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) ঘোষণার আলোচনা চলছে।

পুরো সেতু ও আশপাশের এলাকায় থাকবে সিসিটিভি। নিরাপত্তা তদারকিতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।

গত ১৭ মে মঙ্গলবার টোল নির্ধারণ করে জারি করা প্রজ্ঞাপনেই উল্লেখ করা হয়েছে সেতুর ওপর দিয়ে কোন ধরনের যান চলতে পারবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোটরসাইকেল, তিন এক্সেলের বড় বাস, পিকআপ, ৩২ সিটের মাঝারি বাস, কার, জিপ, চার এক্সেল ট্রেলার, মাইক্রোবাস, মিনিবাস (৩১ সিট বা তার কম), ৫-১১ টন পরিবহনে সক্ষম ট্রাকসহ মোট ১০ ধরনের যান চলবে এই সেতুতে।

পদ্মা সেতুতে মেনে চলতে হবে, এমন কিছু নিয়ম উল্লেখ করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো—

১। পদ্মা সেতুতে অনুমোদিত গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।
২। পদ্মা সেতুর ওপর যে কোনও ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো এবং যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
৩। তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মোটোরাইজড গাড়িযোগে সেতু পার হওয়া যাবে না।
৪। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া ও ৫.৭ মিটারের চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতু দিয়ে পার করা যাবে না।
৫। সেতুর ওপর ময়লা ফেলা যাবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় সেতুর প্রথম স্প্যান। ওই দিন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে বসানো হয় স্প্যানটি।

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার আববাহিকায় ৪২টি পিলারের ওপর ১৫০ মিটার করে ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ও ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু এখন প্রস্তুত।

পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৯১৮ হেক্টর জমি। সেতুর পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর সংযোগসহ এর দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারে।

শুরুতে বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশের জিডিপিতে এর অবদান হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু খুলে দেওয়ার প্রাক্কালে অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণে তা দুই শতাংশে দাঁড়ায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালী। তবে রাতে সেতুটিতে জ্বলবে জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ বাতি।

খুঁটি-নাটি

পদ্মার পানির স্তর থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে বসানো হয়েছে প্রতিটি স্প্যান।
পদ্মা সেতু নির্মাণে পদ্মার বুকে খুঁটি বসাতে হয়েছে ৪০টি।
১৮টিতে ছয়টি করে পাইল সাজিয়ে খুঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২২টি খুঁটিতে সাতটি করে পাইল গাঁথা হয়েছে।
দুই পাড়ে রয়েছে মূল সেতুর আরও দুটি খুঁটি। সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটির ওপর বসেছে মূল সেতু। তবে সড়কে সংযোগ ঘটাতে দুই পাশে আরও বেশকটি খুঁটি রয়েছে। সব মিলিয়ে খুঁটির সংখ্যা ১৩৩টি।